shono
Advertisement
Durga Puja 2024

মাতৃ আরাধনা এবার মায়ের ভাষায়! বিদেশের এই পুজোয় হাজির হারিয়ে যাওয়া কলকাতাও

এবছর 'ত্রিনয়নী'র পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ রাঘব চট্ট্যোপাধ্যায় এবং সোমলতা আচার্য।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 02:16 PM Sep 29, 2024Updated: 03:48 PM Sep 29, 2024

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির প্রাণের উৎসব সর্বজনীন থেকে বিশ্বজনীন হয়েছে আগেই। শরতে পৃথিবীর প্রতি কোনায় একটা না একটা দুর্গাপুজোর খোঁজ ঠিক পাওয়া যায়। সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারে যেসব দেশে বাঙালি শারদোৎসব পালন করে থাকে, তার মধ্যে একটা আমেরিকা। যত বেশি বাঙালি কর্মসূত্রে সে দেশে যান, পুজোর উদ্যোগ তত বাড়তে থাকে। আন্তর্জাল বলছে, আমেরিকার দুর্গাপুজোর ইতিহাস কয়েক দশকের পুরনো। বিশেষত নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি হয়ে উঠেছে আমেরিকান দুর্গাপুজোর প্রাণকেন্দ্র। এবছর তো নিউ জার্সিতেই কুড়িটির বেশি পুজো হচ্ছে। তারই মধ্যে নজর কাড়তে চলেছে 'ত্রিনয়নী'র থিম পুজো। হারিয়ে যেতে বসা কল্লোলিনী তিলোত্তমা ফুটে উঠবে তাদের পুজোয়। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, এবার তারা মা দুর্গার পুজো করবে মাতৃভাষায়!

Advertisement

'চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন...'। হ্যাঁ, ব্রিটিশ শাসনাধীন কলকাতার পথ চিরে চলে যাওয়া ট্রামলাইন নিয়ে এখন এভাবেই স্মৃতির পাতা সাজাতে চলেছে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ট্রামের যাত্রা শেষ। শুধু জীবন্ত ইতিহাসের দলিল হিসেবে প্রাণের শহরে শুধুই ঐতিহ্যের সফর হিসেবে তার অস্তিত্ব থেকে যাবে টিমটিম করে। আর সেই বিদায় পর্বকেই যেন সেলিব্রেট করতে চলেছেন নিউ জার্সির 'ত্রিনয়নী' পুজো উদ্যোক্তারা। 'সিটি অফ জয়' থিমে তাঁদের পুজোর মণ্ডপে ট্রাম তো বটেই, কলকাতা হাজির হচ্ছে তার সমস্ত হারানো সম্পদ নিয়ে। মাত্র দুবছর আগে শুরু হওয়া নিউ জার্সির এই পুজো এখন সম্পূর্ণরূপে আত্মনির্ভর। কুমোরটুলি থেকে মাতৃমূর্তি আমদানি কিংবা মণ্ডপশিল্পীদের নিয়ে যাওয়া নয়। সেখানেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা থেকে সাজসজ্জা - সব। আর এখানেই আমেরিকার আর পাঁচটা পুজোর চেয়ে স্বতন্ত্র্য ছাপ রাখছে 'ত্রিনয়নী'র মাতৃ আরাধনা।

ট্রাম, হলুদ ট্যাক্সি কলকাতার ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। নিজস্ব চিত্র।

২০২২ সালে নিউ জার্সি এবং পেনসিলভানিয়ার কয়েকটি বাঙালি পরিবার মিলে এই পুজোর সূচনা করেন। প্রথম বছরও সদস্যরা নিজেরা থার্মোকল দিয়ে প্রতিমা বানিয়েছিলেন যামিনী রায়ের শিল্প ঘরানার আঙ্গিকে। অতিথি-অভ্যাগতদের মুগ্ধ করেছিল সেই প্রতিমা এবং তার সাজ। পরের বছর থেকে 'ত্রিনয়নী' শুরু করে থিম পুজো। সে বছর তাদের থিম ছিল 'পথের পাঁচালী'। পুজোর আগে কয়েকমাস নিরলস পরিশ্রম করে নিজেদের হাতে কুঁড়েঘর, তুলসীমঞ্চ, কাশবন আর অপু-দুর্গা দিয়ে সাজিয়েছিলেন পূজা প্রাঙ্গন। শান্তিনিকেতনী আলপনা আর সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালী'র অনন্য পোস্টারে সেজে উঠেছিল স্কুলের করিডর। সেই সজ্জা নজর কেড়েছিল সবার। আর এবার নজর কাড়বে খাঁটি বাঙালিয়ানা অর্থাৎ মাতৃভাষায় মাতৃ আরাধনা।

২০২২ সালে যামিনী রায়ের স্টাইলে দুর্গাপ্রতিমা গড়েছিলেন 'ত্রিনয়নী'র সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র।

এ বছরের থিম City of Joy কলকাতা। ইতিমধ্যেই কাজ চলছে পুরোদমে। অতিথিরা এই বছর ও কিছু অনবদ্য শিল্প নমুনা অবশ্যই আশা করতে পারেন। দেশের নামী শিল্পীদের অনুষ্ঠান প্রায় সব পুজোর অঙ্গ, 'ত্রিনয়নী'ও ব্যতিক্রম নয়। গত বছর ভূমি এবং শৌনক চট্ট্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি 'ত্রিনয়নী'র নিজস্ব শ্রুতিনাটক ও গানের প্রযোজনা মন কেড়েছিল সবার। এবছর 'ত্রিনয়নী'তে আসছেন রাঘব চট্ট্যোপাধ্যায় এবং সোমলতা আচার্য।

মণ্ডপসজ্জায় ট্রাম, হাওড়া ব্রিজ। নিজস্ব চিত্র।

'ত্রিনয়নী'র জনপ্রিয়তার অন্যতম স্তম্ভ তাদের অসাধারণ খাওয়াদাওয়া এবং আতিথেয়তা। দুদিন ধরে ভোগ এবং আমিষ ও নিরামিষ খাবারের অঢেল আয়োজন থাকে এই পুজোয়। সদস্যরা নিজেরা পরিবেশন করে গরম খাবার খাওয়ান অতিথিদের। সঙ্গে থাকে বিশেষ বাঙালি মিষ্টি। বাঙালি তো বটেই, অবাঙালি অতিথিরাও খাবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট শ্রী সুমিত দের মতে, এই সব কিছুকে ছাপিয়ে যা মানুষকে 'ত্রিনয়নী'র পুজোর সঙ্গে একাত্ম করে তা হলো সদস্যদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা। সেই অনন্য আন্তরিকতার কারণেই এই পুজো সবার কাছে নিজের বাড়ির বা পাড়ার পুজোর অনুভূতি বয়ে এনেছে বিগত বছরে। এ বছর ত্রিনয়নীর পুজো হচ্ছে ১২ ও ১৩ই অক্টোবর অর্থাৎ সপ্তাহান্তে। শহর কলকাতার অলিগলি, ইমারত আর জিভে জল আনা খাবার নিয়ে তৈরি টিম 'ত্রিনয়নী'।

নিজেরাই মণ্ডপে বসে তৈরি করছেন সাজসজ্জা। নিজস্ব চিত্র।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মাতৃভাষায় মাতৃ আরাধনা এবার নিউ জার্সিতে!
  • হারিয়ে যাওয়া কলকাতাকে থিম করে বিশেষ আয়োজন 'ত্রিনয়নী'র।
Advertisement