সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৬ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক। চুক্তি মানা নিয়ে তুঙ্গে বাদানুবাদ। অবশেষে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার সবুজ সংকেত দিল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা। ফলে ১৫ মাস ধরে গাজায় যে লড়াই চলছিল তাতে এবার ছেদ পড়তে চলেছে। হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের যুদ্ধে রক্তগঙ্গা বইছে গাজায়। প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বলি নিষ্পাপ শিশুরাও। তবে এবার এই মৃত্যুমিছিল থামার আশা করছে আন্তর্জাতিক মহল। অন্যদিকে, প্রায় দেড় বছর পর পণবন্দিদের ঘরে ফেরার আশায় বুক বেঁধেছে তাঁদের পরিবার।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয় ইজরায়েল-হামাস সংঘাত। তারপর থেকে যুদ্ধবিরতির জন্য লাগাতার মধ্যস্থতা করছিল কাতার, মিশর, সৌদি আরবের মতো একাধিক দেশ। গাজা যুদ্ধে ইজরায়েলের পাশে থাকলেও যুদ্ধবিরতির বৈঠকে নিয়মিত যোগ দিয়েছিল আমেরিকাও। চলতি জানুয়ারি মাসেই মিশরের কায়রোতে আলোচনায় বসে হামাস ও ইজরায়েলের প্রতিনিধিরা। দুপক্ষের বৈঠক সদর্থক হয়। তখনই শোনা গিয়েছিল সব ঠিক থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই যুদ্ধে ছেদ পড়তে পারে। স্বাক্ষরিত হতে পারে পণবন্দিদের মুক্তির চুক্তি। শেষ পর্যন্ত তেমনটাই ঘটল। চুক্তি অনুযায়ী, আগামীকাল রবিবার থেকেই গাজায় শুরু হবে যুদ্ধবিরতি। সেসময় ৩৩ জন বন্দিকে ইজরায়েলের হাতে তুলে দেবে হামাস। অন্যদিকে, ধীরে ধীরে জেলেবন্দি ৯৫ জন প্যালেস্তিনীয়কে মুক্ত করবে ইজরায়েল।
তবে এই চুক্তিতে সম্মতি জানানো খুব একটা সহজ ছিল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য। লড়াই শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে তিনি পণ করেছিলেন হামাসের শেষ দেখে ছাড়বেন। তাদের নাম মুছে ফেলা না পর্যন্ত তিনি লড়াই থামাবেন না। তাঁর লক্ষ্য পূরণ করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। এই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন শতাধিক ইজরায়েলি সেনাও। কিন্তু পণবন্দিদের মুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল ইজরায়েলিদের মধ্যে। দ্রুত তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হচ্ছিল ক্রমাগত। তাই বন্দিদের মুক্তির বিষয়টিকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তা ক্যাবিনেটের সঙ্গে আলোচনায় বসেন নেতানিয়াহু। চুক্তিতে 'হ্যাঁ' করা হবে কিনা সেনিয়ে ছঘন্টা চলে আলোচনা।
আল জাজিরা সূত্রে খবর, হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে সম্মত ছিলেন না মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইটামার বেনভির এই চুক্তি কার্যকর করা হলে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচও সাফ জানিয়ে দেন, ছসপ্তাহের বেশি যুদ্ধবিরতি চললে তিনি সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। তাঁরা এই চুক্তি মেনে নেওয়াকে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ বলে দাবি করেন। সব মিলিয়ে ৮ জন বিপক্ষে ভোট দেন। কিন্তু ২৪ জন মন্ত্রী সম্মতি জানানোয় যুদ্ধবিরতিতে সবুজ সংকেত দেয় মন্ত্রীসভা। এদিকে, এতদিনে গাজায় মৃতের সংখ্যা ৪৭ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে ইজরায়েলের সম্মতিতে আগামীকাল থেকে গাজার আকাশ থেকে যুদ্ধের কালো মেঘ সরে যাওয়ার আশা করছে আন্তর্জাতিক মহল।