সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্ব মানচিত্রে ক্রমে প্রবলভাবে উপস্থিতি জাহির করছে চিন। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের নামে ঋণের ফাঁদ পেতে বহু দেশকে কার্যত কবজা করে ফেলেছে কমিউনিস্ট দেশটি। বরাবর এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে ভারত। চিনের 'ফাঁদে' পা দিয়েছে পড়শি দেশ নেপালও। দীর্ঘ বোঝাপড়ার পর বেল্ট অ্যান্ড রোডে যোগ দিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করেছে কাঠমান্ডু। যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নয়াদিল্লির কপালে।
চলতি বছর তৃতীয়বার নেপালে ক্ষমতায় ফিরেছেন কেপি শর্মা ওলি। আর প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর প্রথম বিদেশ সফরে চিনে গিয়েছেন তিনি। এই সফরেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বেল্ট অ্যান্ড রোডে যোগদান নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। ২০১৭ সালে প্রাথমিকভাবে এই দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। তার পর চুক্তি সম্পূর্ণ হওয়া নিয়ে সাত বছর নানা আলোচনা হয়েছে। অবশেষে এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। জানা গিয়েছে, বুধবার কীভাবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটবে তা নিয়ে দুদেশের রাষ্ট্রনেতা ও প্রতিনিধিরা আলাদা করে বৈঠকে বসেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রথা ভেঙে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য ভারতের বদলে চিনকে বেছে নিয়েছেন ওলি। নেপালের মসনদে বসলে দিল্লিতেই প্রথম আসতেন প্রধানমন্ত্রী। এবার সেই নীতির বদল ঘটল। ফলে সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, আড়ালে বেজিংয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদেশনীতি বা কূটনীতির বদল করছে?
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে ভারত উপমহাদেশে কৌশলগত অবস্থান মজবুত করছে চিন। বাংলাদেশে এই প্রকল্পের জাল ছড়াতে মরিয়া তারা। সাম্প্রতিক সময়ে ওপার বাংলায় আনাগোনা বাড়িয়ে চিনা আধিকারিকরা। অন্যদিকে, চিনের ফাঁদে পা দিয়ে ঋণের বোঝায় জর্জরিত আর এক পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কা। বেল্ট অ্যান্ড রোডে নাম লিখিয়েছে পাকিস্তানও। আর এই বিতর্কিত প্রকল্পের একটি অংশ গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে এই প্রকল্প যে আদতে একটা জাল তা নিয়ে বরাবরই দিল্লি সরব হয়েছে। কিন্তু এবার মাথাব্যথা বাড়িয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোডে যোগ দিল নেপাল।
উল্লেখ্য, বহুদিন ধরেই নেপালে বাড়ছে চিনের প্রভাব। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড চিনপন্থী বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি যে চিনের হাতে তামাক খান তা কারও অজানা নয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন চিনে গিয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। জিনপিংকে নেপালের ‘প্রকৃত বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন প্রচণ্ড। এখন চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করছেন ওলি। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। কারণ উদ্বেগ বাড়িয়ে একে একে সব পড়শি দেশেই প্রভাব বিস্তার করছে চিন।