অভিরূপ দাস: খেল দেখাচ্ছে বটে বাইশের গ্রীষ্ম (Kolkata Weather)। আক্ষরিক অর্থেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ঝলসে দিচ্ছে শরীর। খাস কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ত্বকরোগ বিভাগের ডাক্তারবাবুদের অভিজ্ঞতা এমনই। গত ক’দিন যাবৎ এমন বহু রোগী আসছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে। যাঁদের পিঠ, গলা, হাতের মতো জায়গা সত্যিই যেন পুড়ে গিয়েছে। ফোস্কার বহর দেখে পোড়খাওয়া চিকিৎসকরাও থ। তাঁরা বলছেন, কলকাতায় গরম পড়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু রোদের তেজে মানুষের চামড়ার এমন দশা দীর্ঘ ডাক্তারি জীবনে দেখেননি।
বাস্তবিকই কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গে দহনজ্বালা এমন জায়গায় পৌঁছেছে, প্রবীণরাও মনে করতে পারছেন না শেষ কবে টানা এমনটা হয়েছে। আর তা না পারাই স্বাভাবিক। খোদ আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরাও এমন টানা দাবদাহের নজির খুঁজতে গিয়ে মাথা চুলকোচ্ছেন। নথি ঘেঁটে বুধবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের মত, তাপপ্রবাহ হয়েছে আগেও। কিন্তু শহর কলকাতায় টানা এমন তাপপ্রবাহের নজির গত বিশ বছরে দেখা যায়নি। এই মুহূর্তে এর থেকে কোনও আশু নিষ্কৃতিও দেখছেন না আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
[আরও পড়ুন: যাদুঘরে মহিলা কর্মীর ‘শ্লীলতাহানি’! সহকর্মীর বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের]
বৃহস্পতিবারও কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। দুপুর ১১টা থেকে ৪টে চাঁদিফাটা গরমে ঘুরতে বারণ করেছে আবহাওয়া দফতর। বিশেষ এই সময় রোদে ঘোরাঘুরি করলেই শরীরের অনাবৃত অংশে ফোস্কা পড়ছে। ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক লাহিড়ী জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ঘাম হয়ে রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ রোমকূপে ঘাম জমে জমে ফোস্কা পড়ছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ত্বকরোগ বিভাগে বুধবার ১২ জন এসেছিলেন ফোস্কা নিয়ে। ত্বকরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. অভিষেক দে জানিয়েছেন, সূর্যের তাপে পিঠে ফোস্কা নিয়ে রোগী আসছে আউটডোরে। কোথায় হচ্ছে এমন ফোস্কা? চিকিৎসকের কথায়, টানা কয়েকদিন ধরে ৩৭/৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা! পেশার তাগিদে রাস্তায় বেরোচ্ছেন অনেকেই। শরীরের যে অংশে অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে সেখানেই এই ধরনের ফোস্কা পড়ছে। গরমে শরীরের ক্ষুদ্র রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সেই বন্ধ রোমকূপে ঘাম জমে এই ধরনের ফোস্কা দেখা যাচ্ছে। বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা কিনা স্বাভাবিকের দু’ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে সর্বোচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। তবে এসবের মধ্যেও আশার কথা, জলীয় বাষ্প জমছে বঙ্গোপসাগরের উপরে। এবং তা জরিপ করেই হাওয়া অফিসের অনুমান, পয়লা মের পরে তিলোত্তমাসহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হলেও হতে পারে। অন্তত তাপমাত্রা কিছুটা নেমে পরিস্থিতি সহনীয় হওয়ার সম্ভাবনা।