সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন লাস্ট মিনিট সাজেশন! পরীক্ষার ২৪ ঘন্টা আগে সবকিছু চোখ বুলিয়ে নেওয়া। ভোট ঘোষণার প্রায় আড়াই মাস পর ষষ্ঠ দফায়, শনিবার জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় ভোট। তাই শুক্রবার দিনভর রণকৌশল সাজালেন প্রার্থীরা। পুরুলিয়া কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াইয়ে মোট ১২ প্রার্থী। তার মধ্যে কুড়মি প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। কুড়মি ভোট টানতেই রাজনৈতিক দলগুলির এমন সিদ্ধান্ত।
এদিন দিনভর ব্যস্ত ছিলেন শাসক দলের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো। চব্বিশের লোকসভা ভোট (2024 Lok Sabha Election) ঘোষণার সময় থেকেই এই কেন্দ্রে তৃণমূল (TMC)অ্যাডভান্টেজে। সহজ-সরল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর জন্যই। তিনি সারাদিন তাঁর দলের ভোট মেশিনারির সঙ্গে যোগাযোগ করে যান। ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি এবং কয়েকটি বুথে সরাসরি বুথ সভাপতির সঙ্গে তিনি নিজে যোগাযোগ করে ভোট করানো বলতে যা বোঝায় তার টিপস দেন। সেই সাত সকাল থেকে ভোট মেশিনারিকে একেবারে সক্রিয় করার কাজ শুরু করায় দুপুরে আহার সারতে প্রায় বিকাল তিনটে বেজে যায় তাঁর। ভাত, ডাল আর সামান্য লাউ পোস্ত দিয়ে তিনি লাঞ্চ সারেন।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপি বাংলায় দুর্গোৎসব বন্ধ করতে চায়’, প্রচারে ধর্মীয় ‘তাসে’ই আক্রমণ অভিষেকের]
একেবারে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, "সেই সকাল থেকে ভোট মেশিনারিকে সম্পূর্ণভাবে চাঙ্গা করতে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করতে হয়েছে। ব্লক, অঞ্চল সভাপতি ছাড়া বুথ সভাপতির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। ফলে দুপুরের খাওয়া সারতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।" বিরোধীরা যাতে ভোটের দিন কোন ঝামেলা পাকাতে না পারে তাই পুরুলিয়ায়(Purulia) এবার শাসক দলের তরফে ব্লকে-ব্লকে ১০-১৫ জন করে ডিজিটাল ভলান্টিয়ার থাকছে। যারা কোনরকম ঝুট-ঝামেলা হলে তা কমিশনের নজরে আনবেন। সেই সঙ্গে সোশাল মিডিয়া (Social Media) প্রচার করে বিরোধীদের তুলোধোনা করবেন। এই 'ডিজিটাল ভলান্টিয়ার'দের নিয়ে এদিন একটি ভিডিও কনফারেন্স হয়।
একইভাবে বিজেপি প্রার্থী (BJP Candidate)জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোও সারাদিন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। ফোন মারফত বুথে বুথে খোঁজ নেন তিনি। এমন কোন বুথ বাকি রয়ে যাচ্ছে না তো যেখানে পদ্মের এজেন্ট নেই। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে যান তিনি। পুরুলিয়ার প্রায় ৫০ টি মতো বুথ এলাকায় বিজেপির সংগঠন দুর্বল। সেখানে বুথ কমিটি সেভাবে তৈরি করতে পারেনি বিজেপি (BJP)। সেখানে এজেন্ট দিতে হিমশিম অবস্থা হয় গেরুয়া শিবিরের। ওই বুথ গুলোতে কিভাবে ভোট করানো যায় সে বিষয়ে রণকৌশল চূড়ান্ত হয়।
বিজেপির তরফে দেওয়া হেল্পলাইন।
শাসক ও বিজেপি প্রার্থীর মত ভোটের আগের দিন রণকৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত ছিলেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস (Congress) প্রার্থী নেপাল মাহাতোও। এদিন কুড়মি প্রার্থী অজিত প্রসাদ মাহাতোও সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে ফোনে ব্যস্ত ছিলেন সকাল থেকেই। দশটা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন করার পর তাঁর নিজের ভোট মেশিনারিকে চাঙ্গা করতে যোগাযোগ শুরু করেন। এদিন কুড়মি প্রার্থী বলেন, "আমাদের জনজাতির মানুষজনকে ভোট প্রচারে নামানোর জন্য আমি একটা টাকাও খরচ করিনি। সাধারণ মানুষ আবেগে আমাকে জেতাতে ঘর থেকে বার হয়ে এসেছেন। ভোটের খরচের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সংগ্রহ করে আমার হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কয়েক হাজার কুড়মি যুবক আমার হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন। ভোট প্রচারে নামানোর জন্য একটা টাকাও খরচ না করা এ ইতিহাস হয়ে থাকবে।"
[আরও পড়ুন: ‘রেমাল’ সামলানোর প্রস্তুতি, নবান্নে জরুরি বৈঠকে দিকনির্দেশ দিলেন মুখ্যসচিব]
কুড়মি (Kurmi) প্রার্থী ভোট মেশিনারিতে এগারোটা থেকে ব্যস্ত থাকলেও সাড়ে বারোটা নাগাদ তিনি দুপুরের আহার সেরে নেন। ভাত, নিম-আলু, রাহের ডাল, বেগুন, আলু, বরবটি তরকারি সেইসঙ্গে বিলাতি পুড়িয়ে নুন-লঙ্কা দিয়ে লাঞ্চ সারেন। এদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন বাঁকুড়ার সংগঠকরা। কিভাবে বুথে বুথে তাঁরা ভোট করাবেন সেই টিপস দেন তিনি। তবে পুরুলিয়া কেন্দ্রে সব বুথে কুড়মি জনজাতির এজেন্ট নেই। সেখানে তাদের হিতমিতান অর্থাৎ সহযোগী সামাজিক সংগঠনগুলির তরফে এজেন্ট বসানো হয়।