সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার (Coronavirus) সুদূরপ্রসারী প্রকোপে। ঋণের দায়ে স্ত্রী সন্তানদের খুন করে আত্মঘাতী যুবক। শনিবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে পাঞ্জাবের (Punjab) ফরিদকোট জেলায়। বাড়ির কর্তা ধরমপাল লিখে গিয়েছেন সুইসাইড নোট। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ৮ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার পর তা শোধ করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত এমন ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে। তিন পাতার ওই সুইসাইড নোটে চল্লিশ বছরের ধরমপাল বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন, কীভাবে লকডাউনের সময় থেকে সংসার চালানো ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার উপরে ছিল ঋণশোধের চাপ। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির কাছে হার মেনে তিনি নিজে শুধু মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন না। সেই সঙ্গে পরিবারের বাকিদেরও গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন। ধরমপাল ছাড়া তাঁর স্ত্রী সীমা (৩৬), ১৫ বছরের কন্যা মনিকা (১৫) ও ১০ বছরের পুত্র হিতেশেরও (১০) মৃত্যু হয়েছে অগ্নিদগ্ধ হয়ে।
ফরিদকোটের পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট সিং মালহি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গোটা পরিবারের সবাই যখন ঘুমোচ্ছিল তখনই ঘরের মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেন ধরমপাল। তার আগে পরিবারের সদস্যদের গায়ে তিনি ঢেলে দেন ১০ লিটার কেরোসিন। বিস্ফোরণের ধাক্কায় মুহূর্তের মধ্যে ঝলসে যান সকলে। যদিও এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ডাক্তার ঈশ্বরের রূপ, নবরাত্রির শুরুতেই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল ‘দশভুজা’ চিকিৎসকের ছবি]
এক ইট ভাটায় মুনিম তথা হিসেব রক্ষকের কাজ করতেন ধরমপাল। এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ৮ লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। তারপর থেকে প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্কে ঋণ শোধ করছিলেন। কিন্তু লকডাউনের সময় থেকে ইট ভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যায়। রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রমেই ঋণের ফাঁস চেপে বসতে থাকে গলায়।
দেশের মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা ৭৫ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু অতিমারীর প্রকোপে পরোক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের হিসেব ধরলে করোনার প্রকৃত দংশনটা বোধহয় আরও ব্যাপক। লকডাউনের পরে আনলক শুরু হলেও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে। কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। খেয়েপরে বেঁচে থাকার জীবনযাপনও হয়ে দাঁড়িয়েছে অলীক স্বপ্নের মতো। সারা দেশেই ছবিটা কমবেশি একই। রোজগার হারানো বা কমে যাওয়ার করুণ ও মর্মান্তিক এক পরিণতিই দেখা গেল পাঞ্জাবের ফরিদকোটের এই ঘটনাতেও।