সুব্রত বিশ্বাস: ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে। মা অসুস্থ। কাকা সামান্য কেবলের কাজ করেন। এমন পরিস্থিতিতেও সোনি সাউ জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সমস্ত স্বপ্ন চোখের নিমেষে গুঁড়িয়ে গেল রেলের বুলডোজারের ধাক্কায়। জুন মাসেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল কিশোরের। তা এখন অনিশ্চিত। তার মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে অনেকেই। পরীক্ষার মুখে ঘর থেকে রাস্তায় এসে পড়ল সকলের জীবন।
উল্টোডাঙায় রেলের (Indian Railways) পরিত্যক্ত আবাসনে কোনওমতে মুখ গুঁজে থাকত সোনির পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার। রেলের খাতায় ওঁদের পরিচয় ‘বহিরাগত’। এক সপ্তাহের নোটিসে সকলকে ঘরছাড়া করতে শুক্রবার আবাসনের উপর দিয়ে চালানো হল বুলডোজার। মোট ৪০টি আবাসন ভেঙে দিল রেল। শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে এসে পড়লেন আবাসিকরা। চোখের পলকে মাটিতে মিশে গেল এতদিনের আস্তানা। বাকি আরও যেসব আবাসন রয়েছে সেগুলিও উচ্ছেদ করা হবে বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। শিয়ালদহের ডিআরএম এসপি সিং বলেন, “আবাসনগুলি ভগ্নদশায় ছিল। বিপজ্জনকভাবে বসবাস করছিলেন মানুষজন। তাঁদের এভাবে কোনও অধিকার নেই। পাশাপাশি আবাসন ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটলে দায় বর্তাবে রেলের উপর।”
[আরও পড়ুন: ‘এত প্রকল্পের অর্থ আসবে কোথা থেকে?’, বাজেট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ বিরোধীদের ]
রেলের এই উচ্ছেদকে বর্বরোচিত বলে ব্যাখ্যা করেন স্থানীয় বিধায়ক মালা সাহা। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, “রেলের থেকে ছ’মাসের সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়ই দিল না। কেন্দ্রীয় সরকার গরিবের প্রতি অন্যায় অত্যাচার চালাচ্ছে, তার প্রমাণ এই উচ্ছেদ। বহু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে।” অতিমারীতে মানুষ দিশাহারা, এর মধ্যে এই উচ্ছেদ অমানবিক বলে তিনি অভিযোগ করেন।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের অন্তর্বর্তী বাজেট: প্রতি বছর চলবে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের কাজ, বরাদ্দ ১৫০০ কোটি]
উল্লেখ্য, কয়লার ডিপো তুলে সেখানে তৈরি হয়েছে কলকাতা স্টেশন। স্টেশনের অদূরে পরিত্যক্ত রেল আবাসনে বছর ১৫ ধরে ঘরছাড়া মানুষজন ও পরিবারগুলি ঢুকে ছিল এক এক করে। হতদরিদ্র এই মানুষগুলির বৈধ আশ্রয় না হওয়ায় তা ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল রেল। শুক্রবার তা কার্যকর করা হল। শতাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মী, RPF এদিন বুলডোজার নিয়ে প্রায় ৪০টি আবাসন ভেঙে দেয়। বাকি আবাসানগুলির দরজা, জানালা ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয়। বসবাসের অযোগ্য করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় ঘরছাড়া মানুষগুলোর ভরসা এখন ফুটপাথ।