দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: যশ বা ইয়াসের (Cyclone Yaas) দাপটে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে সুন্দরবন। ভেঙেছে বহু ঘর। কাঁকড়া ধরে উপার্জনের টাকায় ঘর মেরামতের স্বপ্ন নিয়ে ঝিলার জঙ্গলে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের সুনীল সরদার। উপার্জন তো দূর, তার আগেই বাঘের হামলায় প্রাণ গেল মৎস্যজীবীর। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
সুন্দরবন উপকূলীয় থানার কুমিরমারি গ্রামের বাসিন্দা সুনীল সরদার। যশ বা ইয়াশের দাপটে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই এলাকা। নোনাজল ঢুকে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুনীলের ঘরও। কিন্তু মেরামতির সামর্থ্য তাঁর ছিল না। ত্রাণ সামগ্রীতে দু’বেলা পেট ভরলেও ঘর মেরামত কীভাবে করবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এরপরই উপার্জনের জন্য কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো বুধবার সকালে সুনীল-সহ তিনজন মৎস্যজীবীর একটি দল সুন্দরবনের ঝিলার জঙ্গলে যায় কাঁকড়া ধরতে। জানা গিয়েছে, নৌকো নিয়ে তাঁরা খালে প্রবেশ করতেই জঙ্গল থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। প্রত্যক্ষদর্শী কার্তিক দাস বলেন, “নৌকোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সুনীলের ঘাড়ে কামড় বসায় বাঘ। এরপর মুখে করে ওকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা সকলেই চিৎকার করে বাঘের পিছু ধাওয়া করে মুখ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। তবে বাঁচাতে পারলাম না।” জঙ্গল থেকে কুমিরমারি আসার পথেই মৃত্যু হয় সুনীলের। ঘূর্ণিঝড়ের দাপট কাটার পর এই নিয়ে ৩ জন বাঘের হানায় প্রাণ হারালেন।
[আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে দুর্যোগ, কোটাল-নিম্নচাপের জোড়া ফলায় রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা]
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই ভগবতী মণ্ডল নামে এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয় সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে। তাঁর বাড়ি সুন্দরবনের সাতজেলিয়া এলাকায়। ভগবতী দেবীর স্বামী কোনওরকমে দেহটি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। গত শনিবার বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় গোসাবার ছোট মোল্লাখালি গ্রামের আনন্দ ধর নামের আরও এক মৎস্যজীবীর। নিহত ওই মৎস্যজীবী সুন্দরবনের কাঁকসার জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারান। বুধবার ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যশ বা ইয়াসের পরেই ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে বাঘের আক্রমণে নিহতের তালিকা। বনদপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ওই মৎস্যজীবী পরিবারটির কোনও সরকারি অনুমোদন ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি অনুমোদন থাকলে মিলবে ক্ষতিপূরণ।