অভিরূপ দাস: হৃদস্পন্দনে অদ্ভুত শব্দ। যেন ময়দানে ছোটাছুটি করছে পাগল ঘোড়া। ইকোকার্ডিওগ্রাম করে সাড়ে এগারো বছরের বাচ্চার বুকে যা শুনে তাজ্জব বনে যান চিকিৎসকরা। কিন্তু এমন কেন? রুবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই বাচ্চাটির বুকে তিনটে আলাদা আলাদা শব্দ হচ্ছিল। ঠিক যেমন ময়দানে ঘোড়া ছুটলে হয়। আদতে হার্টের ভালভে সমস্যা হওয়ার জন্যেই এমন কাণ্ড!
আজব এ ঘটনার জন্যও দায়ী মারণ করোনা ভাইরাস (Corona Virus)! বাচ্চার শরীরে তা কখন ঢুকেছে টেরই পাননি পরিবারের লোকেরা। উপসর্গই ছিল না যে। শুধুমাত্র অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা নিয়ে মালদহ জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে সম্প্রতি রুবি জেনারেল হাসপাতালে এসেছিল সাড়ে এগারো বছরের বাচ্চাটি। বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নিকোলা ফ্লিন জানিয়েছেন, “আমরা শুধু জানতাম বাচ্চাটির অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস (Pancreatitis ) ছিল।” কী এই অসুখ? সাধারণত পাচক রস বা এনজাইমস তৈরি হওয়ার পরে তা প্যানক্রিয়াসে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। অন্ত্রে পৌঁছনোর পরেই সেগুলি সক্রিয় হয়। এবং খাবার হজমের ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু কোনও কারণে যদি প্যানক্রিয়াসে থাকা অবস্থাতেই এনজাইমগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন তা প্যানক্রিয়াস গ্ল্যান্ডকেই হজম করতে শুরু করে তখনই বিপদ। হজম করার এই প্রক্রিয়ার ফলে ইনফ্ল্যামেটরি মিডিয়েটর বেরোয়। যা ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের এই প্রদাহকেই প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে।
[আরও পড়ুন: দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সমন্বয়ের অভাব! প্রশ্ন বঙ্গ বিজেপির অন্দরে]
চারদিনের জ্বর নিয়ে বাচ্চাটি যখন হাসপাতালে আসে তখন তার শরীর ছিল অত্যন্ত দুর্বল। হৃদস্পন্দনের গতি ছিল অত্যধিক বেশি। দুটো চোখ এবং জিভের রং অস্বাভাবিক লাল। এসবের মধ্যেই কোভিড টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু কোভিড অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতেই দেখা যায় তা ১৬৩ মাত্রায়। অর্থাৎ কোনও একসময় কোভিড হয়েছিল শিশুটির। কিন্তু উপসর্গ না থাকায় টের পায়নি পরিবারের লোকেরা। এরপর ট্রাইকাসপিড রিগারজিটেসন, পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন জাতীয় সমস্যাগুলোয় চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, ধীরে ধীরে এমআইএসসি বা মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোমের পথে এগোচ্ছে শিশুটি। করোনা ভাইরাস শরীরের একাধিক অঙ্গ প্রতঙ্গে প্রদাহ তৈরি করেছে। তাতেই স্বাভাবিক কাজ করছে না শরীরের নানান অঙ্গ। মস্তিষ্কের এমআরআই এ দেখা যায় গণ্ডগোল সেখানেও। ডোবুটামাইন ওষুধ প্রয়োগ করে শিশুটিকে কার্ডিয়াক ফেইলিওর হওয়ার হাত থেকে বাঁচান চিকিৎসকরা। দেওয়া হয় মাইলরিনোন ইঞ্জেকশন। জীবন বাঁচাতে দেওয়া হয় মিথাইল প্রেডনিসোলন ইঞ্জেকশন। টানা ১১ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে শিশুটি। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ঘটনা দেখে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিৎ। পরিবারের কারও কোনও উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত বাড়ির বাচ্চাটিরও টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিৎ।