সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রেসিডেন্সির এক ছাত্রীর পোশাক নিয়ে এবার চরম বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ল শহরের একটি অভিজাত আবাসনে। যে বিতর্ক গড়াল কলকাতা পুলিশের নগরপাল থেকে শুরু করে গড়ফা থানা পর্যন্ত।
[ আরও পড়ুন: এলাকায় বাড়ছে হিন্দুত্ববাদী হাওয়া, এবার রাম-লক্ষ্ণণের মূর্তি বসাচ্ছেন এই তৃণমূল বিধায়ক ]
ইএম বাইপাস লাগোয়া এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা প্রেসিডেন্সির ওই ছাত্রী। তাঁর ফ্ল্যাটের জলের লাইন মেরামতিকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। আবাসনের ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, এই সমস্যার কথা জানাতে ওই ছাত্রী নাকি বাড়িতে পড়া হাফ প্যান্ট এবং গেঞ্জি পরে অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে আসেন। সেই সময় অফিস থেকে তাঁকে এই পোশাক ছেড়ে আসতে বলা হয়। তাই নিয়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের তুমুল বচসা বেধে যায়।
এই পরিস্থিতিতে ওই ছাত্রী ই-মেলের মাধ্যমে বিষয়টি জানান পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে। পাশাপাশি তিনি ফোন করেন গড়ফা থানার পুলিশকেও। ই-মেল দেখে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গরফা থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মেনে থানা থেকে পুলিশ যায় ওই আবাসনে। পুলিশ কথা বলে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী এবং ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের সঙ্গেও। এই ঘটনায় একটি জেনারেল ডায়েরি করে তদন্ত শুরু করেছে গড়ফা থানার পুলিশ।
[ আরও পড়ুন: শাস্তি পায়নি এনআরএস কাণ্ডের দোষীরা, এবার লালবাজার অভিযানে জুনিয়র ডাক্তাররা ]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন দু’য়েক আগে আবাসনের বাসিন্দা ওই প্রেসিডেন্সির ছাত্রীর ফ্ল্যাটে সন্ধ্যার পর আচমকাই জলের লাইনে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সমস্যা মেটাতে ওই ছাত্রী আবাসনের বাইরের এক কলের মিস্ত্রিকে খবর দেন। সেই খবর পেয়ে ওই কলের মিস্ত্রি ছাত্রীর ফ্ল্যাটের জলের লাইন সারাতে আসেন। কিন্তু আবাসনে ঢোকার গেটেই তাঁকে আটকে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরা ওই কলের মিস্ত্রিকে জানান, “আবাসনের নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশ রয়েছে যেন সন্ধ্যা ছ’টার পর বহিরাগত কোনও মিস্ত্রি বা ঠিকাদারকে ঢুকতে দেওয়া না হয়।” তখনই মোবাইলে ফোন করে ওই কলের মিস্ত্রি বিষয়টি জানান ছাত্রীকে।
মিস্ত্রির ফোন পেয়ে ওই ছাত্রী কোনওরকমে বাড়ির পোশাকেই নিচে নেমে আসেন। চলে আসেন নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে। প্রশ্ন তোলেন, “কেন আমার কলের মিস্ত্রিকে আবাসনে ঢুকতে দেওয়া হবে না?” তখন নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, “আবাসনের নিজস্ব মিস্ত্রি রয়েছে। প্রয়োজনে আপনি জলের লাইন সারাতে তাঁদের সাহায্য নিতে পারেন। নয়তো ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন।” এই কথা শুনে ওই ছাত্রী চলে আসেন অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে। সেখানে তখন ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিবিড় দাশগুপ্ত-সহ অন্যান্য কর্তারা।
[ আরও পড়ুন: ফিতে কাটবেন না অমিত শাহ, পুজো বিতর্কে জল ঢালল সংঘশ্রী ]
অভিযোগ, তাঁরা ছাত্রীর সমস্যার কথা না শুনে তাঁকে পোশাক বদল করে আসতে বলেন। ওই ছাত্রী জানান , “আমার সমস্যার কথা অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা শোনেননি। বরং সকলে আমার পোশাকের দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন। এমনকী আমার পোশাকের জন্য আমাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।” ওই ছাত্রী আরও বলেন, “কলের মিস্ত্রি যাতে চলে না যান তার জন্য তাড়াহুড়ো করে আমি বাড়ির পোশাক পরেই নিচে নেমেছিলাম। তাতে আমার দোষ কোথায়? কোনটা আগে? আমার পোশাক, নাকি আমার জলের সমস্যা?” অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিবিড় দাশগুপ্ত জানান, “ঘটনার সময় আমরা যাঁরা অফিসে ছিলাম তাঁরা সকলেই বয়স্ক মানুষ। ওই ছাত্রী আমাদের মেয়ের মতো। তাই আমরা তাকে একটু ভদ্রস্থ পোশাকে আসতে বলেছিলাম। সেই পোশাকে এলেই আমরা তার সমস্যার কথা শুনতাম।”
তবে ছাত্রীকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই ছাত্রীর বাবা সরকারি কর্মচারি। মা শহরের
একটি নামী স্কুলের শিক্ষিকা। ঘটনার পর গড়ফা থানার পুলিশ ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দায়ের করতে বলেছিল। কিন্তু পুলিশকে ছাত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি এ বিষয়ে কোনও আইনি পদক্ষেপ নিতে নারাজ।”
The post শহরের অভিজাত আবাসনে পোশাক বিতর্ক, স্বল্পবাসের অভিযোগে হেনস্তা প্রেসিডেন্সির ছাত্রীকে appeared first on Sangbad Pratidin.