কৃষ্ণকুমার দাস: দুর্নীতিগ্রস্ত, ফাঁকিবাজ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এমন নেতাদের তৃণমূলের জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা সামাজিক প্রকল্প ও পরিষেবাকে যাঁরা গ্রামের গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গাফিলতি করবেন তাঁদেরও আর দলের পদে রাখা হবে না। নানুরে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বৈঠকে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ করিম খান-সহ জেলার জনা চারেক পঞ্চায়েত প্রধান ও এক ব্লক তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ‘শেষবারের মতো’ সতর্ক করে দেন তিনি।
জেলার চার-পাঁচটি ব্লকের সংগঠনের কাজে যে তিনি খুব একটা খুশি নন তাও স্পষ্ট জানিয়ে বুথে বুথে ‘মানুষের দুয়ারে’ দ্রুত পৌছানোর নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। পাশাপাশি নানুরের সমস্ত বিবাদ তিনি যে নিজেই মিটিয়ে দিয়েছেন তা উল্লেখ করে বিধায়ক-ব্লক-অঞ্চল সভাপতিদের একসাথে কাজ করার জন্য কাজল শেখদের বার্তা দেন। সূত্রের খবর, পরবর্তীতে প্রয়োজনে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে অভিষেকের একজন প্রতিনিধি হাজির থাকবেন।
[আরও পড়ুন: ‘আজ কর্ণাটক যা ভাবছে, আগামী দিনে গোটা ভারত ভাববে’, বলছেন অর্থনীতিবিদরা]
টানা তিনদিন প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করেই রোড শো, জনসভা এবং মুখোমুখি আলাপচারিতার মাধ্যমে অনুব্রতহীন জেলার সাংগঠনিক ‘পালস’ বুঝে নিয়েছেন অভিষেক। নবজোয়ারের স্রোতে তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নানা বহু চিঠিতে আবেদন ও অভিযোগ পেয়েছেন। এরপরই অস্থায়ী শিবিরে দলের দশ বিধায়ক, দুই সাংসদ ও ব্লক সভাপতিদের ডেকে পাঠান তিনি। অস্থায়ী শিবিরে প্রতিটি ব্লক ধরে-ধরে আলোচনা করেন। জেলার সাংগঠনিক চিত্র ও জনজোয়ার দেখে খুশি বলে দাবি করেন জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরি। বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বিকাশ রায়চৌধুরি, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শোনেন। বৈঠকে পর্যালোচনার পর অভিষেকের দেওয়া নির্দেশগুলি হল-
১) জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ করিম খান-সহ কয়েকজন প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। বাসাপাড়ার মেলার মাঠের জমি নিয়ে অভিযোগ ওঠায় প্রথমে করিমকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে চান। কিন্তু দলের দুর্দিনের কর্মী ও প্রথম দিন থেকে তৃণমূলের হয়ে নানুরে লড়াই করা করিমকে জেলার শীর্ষ নেতাদের যুক্তি মেনে ‘শেষবারের মতো’ সতর্ক করেন তিনি। প্রধানদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, গত তিন মাসে রাজ্যে চারজন প্রধান পদ থেকে অপসারিত হয়েছে। সংশোধন না হলে এদেরও অবস্থা একই হবে।
[আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় নির্ভয়া কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতে ফের গণধর্ষণের বলি ২ নাবালিকা!]
২) দুবরাজপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি ভোলা মিত্রকে বৈঠকেই দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিরস্কার করেন। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রিক অভিযোগ নিয়ে চেপে ধরার পাশাপাশি ঔদ্ধত্য নিয়ে ভোলাবাবুকে সতর্ক করে দেন অভিষেক।
৩) দলীয় কর্মসূচি পালন ও সরকারি প্রকল্প এবং পরিষেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মুরারই ১ ও ২, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট ১ ও ২ ও খয়রাশোল ব্লককে আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪) দলে কোনওরকম গোষ্ঠীদন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। নানুরের বিধায়ক বিধান মাঝি-সহ কয়েকজন বিধায়ককে স্থানীয় ব্লক ও অঞ্চল সভাপতিদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেন। পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনাকেও তো আগামী দিনে ভোটে লড়তে হবে? তাহলে এখন থেকে সবাইকে নিয়ে চলার নির্দেশ দেন অভিষেক।
৫) পঞ্চায়েতের পাশাপাশি লোকসভা ভোটের জন্য এখন থেকেই জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু এবং মানুষকে বিজেপির পক্ষপাতিত্ব ও বিপদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানোর নির্দেশ দেন।
৬) নবজোয়ার কর্মসূচির অধিবেশন এবং সিয়ানের বৈঠক, সবর্ত্রই তিনি দলের প্রতিটি কর্মীকে মানুষের সঙ্গে ‘হাসিমুখে কথা বলার’ নির্দেশ দেন। বলেন, যে প্রধান বা জনপ্রতিনিধি মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন, তাঁর দলে থাকার দরকার নেই।