সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাল ২০১৫-১৬। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদিন বন্ধুদের কথা শুনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়েছিল আদিল। তার পর ছুটে পালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। ধরা পড়ে যায় পু্লিশের হাতে। না, বকেঝকে, শাসন করে তাকে ছেড়ে দেয়নি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। শাস্তি দিয়েছিল। প্রথমে মারধর। তার পর নাকে খত। পুলিশের জিপের চারপাশ নাকখত দিতে দিতে ঘোরানো হয়েছিল তাকে। ওই ঘটনায় প্রচণ্ড অপমানিত হয়েছিল আদিল। রেগেও গিয়েছিল খুব। ক্রোধ এতটাই ছিল যে টানা তিন বছর পরও তার স্মৃতি থেকে সেই ঘটনার রেশ মুছে যায়নি। মাঝেমাঝেই বাবা-মাকে সে বলত, “পুলিশ আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন করল?” শুধু তাই নয়। ওই একটি ঘটনা আদিলের স্বভাব-চরিত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ বদল এনে দিয়েছিল। বাবা গুলাম হাসান দার এবং মা ফাহমিদার কথায়, এর পর থেকেই আদিল একগুঁয়ে এবং রুক্ষ স্বভাবের হয়ে পড়েছিল। তার হাবভাব দেখে প্রায়শই মনে হত, সে জঙ্গি দলে ভিড়তে চাইছে।
সাল ২০১৯। ভুল হয়নি আদিলের বাবা-মায়ের সেই আশঙ্কা। জইশ জঙ্গির পরিচয় নিয়ে সেই আদিল মহম্মদ দারই পুলওয়ামায় বৃহস্পতিবার ঘটিয়ে ফেলেছে সেনা-ইতিহাসে অন্যতম ভয়ংকর নাশকতার ঘটনা। কয়েকশো কেজির বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়ে সে সংঘর্ষ ঘটিয়েছে সেনার কনভয়ের একটি বাসের সঙ্গে। আর সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জন আধাসেনার। প্রাণ হারিয়েছে আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল নিজেও।
[ ভারতে ফিদায়েঁ হামলার খবর ফাঁস করেছিলন প্রাক্তন পাক সেনা কর্তা ]
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের কাছে পেশায় ফেরিওয়ালা গুলামের দাবি, ছোট থেকে আদিল মোটামুটি শান্ত স্বভাবেরই ছিল। পুলওয়ামার ঘটনাস্থল থেকে তার স্কুল ছিল হাঁটা পথে ২ কিলোমিটার দূরে। আদিল নিয়মিত স্কুলে যেত। বাড়িও ফিরত সময়ে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে হওয়া ওই একটি ঘটনাই আখেরে তার জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কেন বন্ধুদের কথা শুনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়েছিল আদিল? বাবার উত্তর, “বুঝেসুঝে করেনি। কিন্তু তার জন্য ওর কপালে যে আচরণ জুটেছিল, গোটা জীবন ও তা ভুলতে পারেনি। খুব চটে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই বলত, জঙ্গি দলে নাম লেখাবে।”
কিন্তু ছেলের মুখ থেকে এই রকম কথা শুনে তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিরস্ত করেননি কেন? আদিলের মা ফাহমিদার উত্তর, “অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। পারিনি। স্কুলছুট হয়েই ছেলে নাম লিখিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদে। ওখানে ওর আরও দু’টো নতুন নাম দেওয়া হয়েছিল আদিলকে। ‘আদিল আহমেদ গাড়ি টাকরানেওয়ালা’ আর ‘ভাকাস কম্যান্ডো অফ গান্ডিবাগ।’ শুক্রবার আদিলের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়েছে তার কাকাপোরার গ্রামের বাড়িতেই। দেহ ছাড়াই তার অন্ত্যেষ্টি হয়। অংশ নিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও গ্রামের লোকজন। তবে এ নিয়ে অশান্তি এড়াতে গোটা এলাকায় কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
[ কুলভূষণ মামলায় ১৮ তারিখ আন্তর্জাতিক আদালতে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান ]
The post পুলিশের ‘নাকখত’ শাস্তির প্রতিশোধ নিতেই আদিলের জঙ্গিযোগ, বলছেন বাবা appeared first on Sangbad Pratidin.