অর্ণব আইচ: সেক্সটরশনে জালিয়াতদের নতুন ছক। নিখুঁত ছকে আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে জালিয়াতরা। এরপর নতুনভাবে টাকা আদায় বা ব্ল্যাকমেল করতে জাল করা হচ্ছে ডেথ সার্টিফিকেটের মতো হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ নথি। সম্প্রতি একটি সেক্সটরশনের তদন্ত শুরু করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে দুই জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করে এই ব্যাপারে আরও কিছু তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। কীভাবে তারা ওই জাল নথিগুলি তৈরি করেছে, তা নিয়েই চলছে তদন্ত। মুম্বইয়ের হাসপাতালের ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি হওয়ার সূত্র ধরে এই চক্রের পান্ডারা মুম্বইয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতারই এক বাসিন্দার কাছে সেক্সটরশন কল এসেছিল। ওই ব্যক্তি ভিডিও কলটি ধরে ফেলেছিলেন। তাঁর মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছিল এক মহিলার অশ্লীল ছবি। এর পর থেকেই তাঁর কাছে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ আসতে শুরু করে। ওই ভিডিওকলে তাঁকেও দেখা যাচ্ছে, এই দাবি করে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু হয়। কিন্তু তিনি ওই জালিয়াতদের সাড়া দেননি। এর পরই ‘মোডাস অপারেন্ডি’ পালটায় জালিয়াতরা। ওই ব্যক্তি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ঘেঁটে দেখেন, ভিনরাজ্যের এক পুলিশকর্তার নাম করে পাঠানো হয়েছে একটি মেসেজ। তাতে বলা রয়েছে, তিনি যে যুবতীর অশ্লীল ভিডিও দেখে, তার সঙ্গে চ্যাট করেছিলেন, সেই যুবতীটি সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছে। আর আত্মহত্যার কারণ হচ্ছেন ওই ব্যক্তিটি। ওই ব্যক্তির আচরণেই লজ্জা ও গ্লানিতে রেললাইনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে যুবতী। আর মৃত্যুর আগে লিখে রেখে গিয়েছে ওই ব্যক্তিটির নাম। তাতেও বিশ্বাস হয়নি ওই ব্যক্তির। তিনি প্রথমে ওই মেসেজটিকে গুরুত্ব দেননি।
[আরও পড়ুন:‘রাজ্যের নির্দেশিকা মানতে বাধ্য নন উপাচার্যরা’, রাজভবনের বিজ্ঞপ্তিতে ফের বিতর্ক ]
এর পরপরই তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় মুম্বইয়ের একটি হাসপাতাল থেকে ইস্যু হওয়া ডেথ সার্টিফিকেটের কপি। নিজেকে মুম্বই পুলিশের কর্তা পরিচয় দিয়ে এক জালিয়াত বলে, ওই যুবতীর বাড়ি থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের জিআরপিতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও শেষের ওই মেসেজ ও ডেথ সার্টিফিকেটের ছবি দেখার পর অপ্রস্তুত হয়ে যান ওই ব্যক্তি। ব্যাপারটি মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছে দশ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। তিনি ভয় পেয়েই কয়েকটি অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে শুরু করেন। তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার পর তাঁর সন্দেহ হয়। ওই ব্যক্তি সরাসরি লালবাজারের সাইবার থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে সাইবার থানার আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করে মুম্বইয়ের হাসপাতালটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে হাসপাতাল জানায়, এরকম কোনও যুবতী হাসপাতালে মারা যায়নি। সংশ্লিষ্ট জিআরপিতে খোঁজ নেওয়ার পর ওই ডেথ সার্টিফিকেটটি যে ভুয়ো, সেই বিষয়েও গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন। তারই জেরে উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটের সতীশ কুমার ও হরিয়ানার নুহ থেকে রমেশকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। চক্রের পান্ডাদের সন্ধানে মুম্বইয়ে তল্লাশি চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।