সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর দেশজুড়ে ঝড় চলছে৷ কিন্তু তিনি এই ইস্যুতে ২০ দিনে একটিও রা কাড়েননি৷ বিরোধীরা যতবারই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের বক্তব্য জানতে চেয়েছে, ততবারই এগিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থসচিবকে৷ একা কুম্ভ হয়ে গড় রক্ষা করেছেন শক্তিকান্ত দাস৷ এতদিনে মৌনতা ভাঙলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত প্যাটেল৷ প্রত্যাশিতভাবেই নিজের নিয়োগকারী কেন্দ্র সরকারের সুরে বললেন, “সত্ নাগরিকদের যন্ত্রণা দ্রুত কমাতে আরবিআই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷” একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতো তিনিও প্লাস্টিক মানি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, “নগদ লেনদেনের বদলে কার্ড ব্যবহার শুরু করুক মানুষ৷ তাহলে লেনদেন অনেক সহজ ও স্বচ্ছ হবে৷”
নোট বাতিল, বদল সংক্রান্ত পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনার দায়িত্ব আরবিআইয়ের৷ তা-ই হচ্ছে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যালোচনা, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ, এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিজ্ঞপ্তি জারি ইত্যাদির কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক৷ সময়ে সময়ে ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটেও তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ নিশ্চিতভাবে সেই কর্মকাণ্ডের মূল কারিগর উর্জিতই৷ অবশ্যই অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই সেই কাজ চলছে৷ কিন্তু যখনই জনসমক্ষে কিছু জানানোর বা ঘোষণার প্রয়োজন হয়েছে, সামনে এসেছেন শক্তিকান্ত দাস৷ গত সপ্তাহে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থসচিবের ব্যাখ্যা ছিল, “সরকারের নীতি কে জনসমক্ষে আসছেন সেটা কোনও বিশেষ ব্যাপার নয়৷ আমি সরকারের পক্ষ থেকে সব কিছুই তো জানাচ্ছি৷ আমি আমার নিজের মত কিছু জানাচ্ছি না৷” এই পরিস্থিতিতে উর্জিতের সামনে আসা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে নোট বাতিল ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের প্রতিবাদের জেরে প্রথম দু’সপ্তাহ সেভাবে কাজকর্ম হয়নি৷ আজ, সোমবার থেকে বিরোধীদের কিছুটা হলেও দমানো যাবে এমন পরিকল্পনা থেকেই কি উর্জিতকে সামনে আনা হল, সে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে৷
সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এদিন উর্জিত প্যাটেল বলেছেন, “৫০০ ও হাজারের নোট ফেরতের ফলে ব্যাঙ্কে জমা টাকার পরিমাণ ভীষণভাবে বৃদ্ধির কারণে আরবিআই ধাপে ধাপে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ঘোষণা করেছে৷ সরকার যথেষ্ট পরিমাণে এমএসএস (মার্কেট স্টেবিলাইজেশন স্কিম) বন্ড ইস্যু করলেই এই ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা হবে৷” ব্যাঙ্ক জমা টাকার একটি অংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা রাখে৷ সেই টাকা থেকে ব্যাঙ্ক কোনও আয় করতে পারে না৷
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর জানিয়েছেন, নোট বদলের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতির দিকে সবসময় নজর রাখছে আরবিআই৷ দৈনন্দিন ভিত্তিতে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷ নতুন ১০০ ও ৫০০-র নোটে ভারসাম্য ফেরাতে টাকা ছাপার কাজ শুরু করেছে৷ চাহিদা মেটাতে সরকারি ও আরবিআইয়ের অধীন সব ছাপাখানাতেই কাজ চলছে৷ উর্জিত নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডেবিট কার্ড বা ডিজিটাল ওয়ালেটের ব্যবহার বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এই মাধ্যমে লেনদেন সহজ ও সস্তা৷ এর ফলে ভবিষ্যতে অন্য উন্নত দেশগুলির মতো ভারতেও কম নগদ লেনদেনের অর্থনীতি গড়ে ওঠা সম্ভব৷ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও বেশি পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস) মেশিন সরবরাহের জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দিয়েছি, যাতে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার সহজ হয়৷
উর্জিত বলেন, “ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রেখে চলছে আরবিআই৷ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে এসেছে৷ ব্যাঙ্কের শাখা এবং এটিএমে গ্রাহকদের লাইন ছোট হয়ে গিয়েছে৷ বাজার কাজ করতে শুরু করেছে৷ দৈনন্দিন দ্রব্যের ঘাটতির কোনও খবর নেই৷” তিনি আরও জানান, এটিএমগুলি সময়োপযোগী করতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার নোক নিয়োগ করা হয়েছে৷” উর্জিত বলেন, “নতুন নোট নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে মানুষের৷ যাতে সহজে জাল করা না যায়, তার জন্য এই ভাবে নোট তৈরি হয়েছে৷”
বলা হয়, উর্জিত প্যাটেল সবসময়েই প্রচারের আড়ালে থাকতে চান৷ শুধু নোট বাতিলই নয়, আরবিআইয়ের গভর্নর পদে বসার পরও এটাই সংবাদমাধ্যমে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নোট বাতিল কি খুব জরুরি ছিল? উত্তরে উর্জিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিলের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করেছেন৷ তিনি ভাষণেই জানিয়েছেন, কালো টাকা ও দুর্নীতি রোধেই এই পদক্ষেপ৷” উর্জিত বলেন, “কর ফাঁকির টাকা বড় নোটেই রেখে দেওয়া হত৷ এই টাকা বিশেষ করে সম্পত্তি কেনাবেচায় লেনদেন হত৷ সেখানেও কর ফাঁকি দেওয়া হত৷”