গোবিন্দা রায়: শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ বেনিয়ম সংক্রান্ত একাধিক মামলা হাই কোর্টে বিচারাধীন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির (গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি) কর্মী নিয়োগ, নবম-দশম এবং প্রাথমিকে বেআইনি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের সিবিআইয়ের পেশ করা নথি এবং আদালতের নির্দেশে এসএসসি ও পর্ষদের পেশ করা নথি যাচাইয়ের প্রেক্ষিতে নতুন বছরে প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে প্রায় ৫০০০ জনের ভবিষ্যৎ।
সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশনের চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগ, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে বেআইনি নিয়োগে তথ্য ও নথি দিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছে সিবিআই। পাশাপাশি, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফেও নথি জমা দেওয়া হয়েছে। তার নিরিখে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে বেআইনির সংখ্যা ১৬৯৮। তৃতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে তা ৭৪৪। একই সঙ্গে আদালতে জমা পড়া নবম-দশমে বেআইনির সংখ্যা ৭৯৬ থেকে ৯৫২ এবং একাদশ-দ্বাদশে বেআইনি নিয়োগের সংখ্যা ৬৯১। আইনজীবী মহলের মতে, এই সংক্রান্ত মামলাগুলি এখনও বিচারাধীন রয়েছে আদালতে। সব তথ্য ও নথি প্রমাণিত হলে এঁদের চাকরি যাবে।
এদিকে, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় এক যোগে ২৬৯ জনকে বরখাস্ত করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি তালুকদারের ডিভিশন ঘুরে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, চাকরি যাওয়া এই প্রার্থীদের বক্তব্য শুনতে হবে। তার প্রেক্ষিতে আদালতের দ্বারস্থ হন ৫৪ জন প্রার্থী। যার মধ্যে ৫৩ জনের পুনরায় চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে প্রাথমিকেও ওএমআর শিট বিকৃত করে চাকরির বিষয় সামনে আনে সিবিআই। তার প্রেক্ষিতে ওই বিকৃত ওএমআর শিট প্রকাশও করে পর্ষদ। সব মিলিয়ে পাঁচটি ক্ষেত্রে প্রায় ৫০০০ জন চাকরিরত প্রার্থীর চাকরি চলে যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: রাজ্য পুলিশের আরজি খারিজ, খুনের চেষ্টার মামলায় জামিন পেলেন অনুব্রত মণ্ডল]
প্রসঙ্গত, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ মামলায় বেআইনি সুপারিশে নিযুক্তদের তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট (Calcutta HC)। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর নির্দেশে ১৬৯৮ জনের বিস্তারিত জমা দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মামলায় বেআইনিভাবে এই চাকরি পাওয়াদের প্রথমে স্কুলে না ঢুকতে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও পরে তাঁদের বক্তব্য জানানোর সুযোগ নিয়ে এই বেআইনি নিয়োগের বিষয়ে তাঁদের অবগত করতে নির্দেশ দেয় আদালত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি ছিল, “মোট ১৬৯৮ জনকে বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা উত্তরপত্রে কোনও নম্বরই পাননি। শূন্য রয়েছে সেখানে। অথচ, বেআইনি ভাবে নম্বর বাড়িয়ে এই প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।”
আগেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ৩৩ টি আপিল মামলায় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেন হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ। অনুসন্ধান কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিল, তৃতীয় শ্রেণিতে (গ্রুপ সি) প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরেও বেআইনিভাবে মোট ৩৮১ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২২২ জনের নাম কোনও প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্টে ছিল না। এরা পার্সোনালিটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেনি। তাই ধরে নেওয়া যেতেই পারে এরা কেউ লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেনি বা পরীক্ষায় বসেনি।
[আরও পড়ুন: রাহুল রাম, পাদুকা বইছে কংগ্রেস কর্মীরা! সলমন খুরশিদের মন্তব্যে চটে লাল বিজেপি]
বাকি ১৫৯ জনের ক্ষেত্রে নম্বর বাড়িয়ে এবং ওএমআর শিট বিকৃত করে নিয়োগ করানো হয়েছে। আগেই এসএসসির গ্রুপ ডি-র কর্মী নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছিল বাগ কমিটি। সেখানে ৬০৯ জনের নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে জানায় ওই কমিটি। মেধা তালিকা বা চূড়ান্ত মেধা তালিকা- কোনও ক্ষেত্রে তাদের নাম ছিল না। এদের সল্টলেকের আনন্দলোক হাসপাতালের কাছে নতুন ভবন থেকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করে বাগ কমিটি। সম্প্রতি আদালতে পেশ করা সিবিআই ও কমিশনের তথ্য নথি অনুযায়ী সেই সংখ্যাটা বেড়েছে।