কৃষ্ণকুমার দাস: কাশীপুরের (Cossipore Death) যুবকের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা পড়তেই বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের উপর বেদম চটেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বিশেষ করে গত শুক্রবার যাঁদের কথা শুনে তিনি কাশীপুরে গিয়ে ‘যুবককে খুন করা হয়েছে’ বলে দাবি করেছিলেন সেই নেতাদের উপর ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়েছেন শাহ।
শুধু তাই নয়, আসার পরদিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সি মারফত একটি ছবি পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই ছবি হাজির করে স্থানীয় বিধায়ক অতীন ঘোষ দাবি করেছিলেন, গত ডিসেম্বরে পুরভোটে তৃণমূলপ্রার্থীর প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন মৃত যুবক অর্জুন চৌরাসিয়া। স্বভাবতই কাশীপুরের যে যুবকের দেহ নিয়ে বিজেপি দপ্তরে গিয়ে রাজনৈতিক শহিদের মর্যাদা দেওয়া হল তাঁর পরিচয় নিয়েই বিভ্রান্তি ছিল শুরু থেকে। সেই বিষয়টিও আগে থেকেই শাহকে না জানানোয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তৃণমূলের প্রচারের ছবির কথা আগে জানলে উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে কাশীপুরে শাহ যেতেন না বলে দাবি। তা হলে অন্তত কাশীপুর নিয়ে দলের কিছুটা মুখরক্ষা হত। কিন্তু কিছু ভুইফোঁড় নেতার বাংলার মাটিতে যোগাযোগ না থাকলেও অতি উৎসাহের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলায় দল ডুবছে বলে ক্ষোভ শাহর। বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের উদ্দেশে ভর্ৎসনা করে এমনও বলেছেন, “এরা কেউ মাটির খবর রাখে না। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ভুয়ো তথ্য দেওয়ায় ‘ইসবার, দুশো পার’ বলে মুখরক্ষা হয়নি। কাশীপুরে একটা মৃত্যু নিয়ে ভুল খবর দিয়ে আমায় ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে দলের সম্মান ও মর্যাদা আরও ডুবিয়ে দিল।”
[আরও পড়ুন: ‘বাংলায় বামপন্থীরা এখন সংকটে!’ বাম যুবদের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্বেগ প্রকাশ সব্যসাচী চক্রবর্তীর]
উল্লেখ্য, শাহর ‘খুন’ মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। এই মন্তব্যকে সামনে রেখে বিজেপি দেশব্যাপী বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অপপ্রচারের যে ফানুস তৈরি করেছিল, তা এবার চুপসে গেল। সেনা হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের হাতে ময়নাতদন্ত করিয়ে সেই রিপোর্ট জমা পড়ার পরই আত্মহত্যার তত্ত্ব প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা সফরে আসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ‘রাজনৈতিক খুন’ বলে বিবৃতি দেওয়ান রাজ্য বিজেপির কিছু নেতা।
কিন্তু পরদিন দলেরই একাংশ রিপোর্ট দেয়, কাশীপুর নিয়ে ভিত্তিহীন প্রচার করায় বাঘের পিঠে উঠে পড়েছে বঙ্গ-বিজেপি (Bengal BJP)। রাজধানী ফিরতেই কলকাতার নানা সংবাদপত্রের কাটিং পৌঁছে যায় শাহর টেবিলে। তখনই এমন তথ্য হাতে পেয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। এদিন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কোর্টে জমা পড়তেই দলের পাশাপাশি ভাবমূর্তি নষ্ট হল শাহের। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ রাজ্য বিজেপির নেতারা এখন কাশীপুর কাণ্ডের দায় এড়াতে, মুখ বাঁচাতে একে অপরের উপর পালটা দোষারোপও শুরু করেছেন।