রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় দলের রাশ কার্যত নিজের হাতেই নিচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে দলের প্রচার থেকে কাজকর্মে নজরদারি রাখার জন্য নিজের টিম সাজাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি। প্রতি লোকসভা কেন্দ্র পিছু ৩০জনকে নিয়ে টিম তৈরি হচ্ছে। দিল্লি-সহ ভিন রাজ্য থেকেও বিজেপির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের সেই টিমে রাখা হবে। টিমে কারা থাকবেন তা অমিত শাহর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি ৪২টি লোকসভাপিছু একজন করে কার্যকর্তা নিয়োগ করছে আরএসএস। লোকসভা ভোটে প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে বিজেপির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন তাঁরা। শুক্রবার কলকাতায় দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় পার্টির এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হল জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের।
[রাজ্য পুলিশের রং-মিলান্তি, খাকির বদলে সাদা হচ্ছে উর্দি]
আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ২২টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছেন অমিত শাহ। অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বাংলায় পাঠানোর পাশাপাশি তিনিও বারবার আসছেন। এ থেকেই স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গের উপর বিশেষ নজর দিচ্ছেন মোদি-শাহরা। লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে এবার বাংলায় দলের রাশও নিজের হাতে নিয়ে দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিজস্ব টিম পাঠিয়ে ‘মিশন বাংলা’-র রণকৌশল সাজাচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। শাহই এবার বাংলায় ভোট যুদ্ধের সেনাপতি। তাঁর নির্দেশেই লোকসভা কেন্দ্র পিছু ৩০জনকে নিয়ে তৈরি হবে ওয়ার রুম। ওয়ার রুমে জেলা সভাপতি ও জেলা পর্যবেক্ষকদেরও প্রবেশ নিষেধ। লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সংশ্লিষ্ট জেলার দলের সভাপতি থেকে শুরু করে অন্য নেতারা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, সেদিকে নজর রাখবে ওই টিম। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলার বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে দলের সংগঠন থেকে প্রচার সেসবও দেখবে তারা। ভিন রাজ্যের কর্মীরা ছাড়াও এ রাজ্যেরও আরএসএসের কর্মীদেরও রাখা হতে পারে ওই টিমে। দলের কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিনিয়ত দিল্লিতে অমিত শাহকে রিপোর্ট দেবে তারা। শুধু তাই নয়, ওয়ার রুমে ব্যবহৃত কম্পিউটারের পাসওয়ার্ডও গোপন থাকবে।
এদিন কর্মসমিতির বৈঠকে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ শীর্ষ নেতারা। বিকেলে বক্তব্য রাখেন রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সেখানে তিনি কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, ডিসেম্বরে রাজ্যে দলের রথযাত্রা কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে সফল করতে হবে। তারাপীঠ, কোচবিহার ও গঙ্গাসাগর থেকে তিনটি রথ বেরোবে। যে কোনও একটি যাত্রার উদ্বোধনে থাকবেন অমিত শাহ। এছাড়াও, ৫০টি কর্মসূচির তালিকা দেওয়া হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি থেকে পর্যবেক্ষকদের এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে কৈলাসের বার্তা, “দলের কাজে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখা হবে কার কী পারফরম্যান্স। আমি সব নজরে রাখছি। পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলে দলের পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।” এদিন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে,
এক) ২৬ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযান।
দুই) প্রতি লোকসভাপিছু ৫০ হাজার করে নতুন সদস্য করতে হবে।
তিন) প্রত্যেক নেতাকে পাঁচটি করে পরিবারের কাছে যেতে হবে।
চার) জেলা সভাপতিকে নিয়ে প্রতি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী কমিটি তৈরি।
পাঁচ) জেলায় জেলায় নেতাদের ৫ থেকে ১৫দিন পর্যন্ত গিয়ে থাকতে হবে।
[সেতুভঙ্গে মাথাচাড়া দিচ্ছে ফড়েরাজ, কড়া হুঁশিয়ারি মমতার]
এদিন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, লোকসভা নির্বাচন বাংলায় বিজেপির কাছে সেমিফাইনাল। এ রাজ্যে দলকে বাড়াতে বামেদের একটা অংশের ভোটব্যাঙ্কই যে বিজেপির ভরসা তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের শক্তি নেই। কংগ্রেসের বেশিরভাগ ভোট তৃণমূলের দিকে যাবে। কট্টর বামপন্থীদের ভোট ছাড়া বামেদের ভাসমান যে ভোটাররা আছেন তাঁদের টার্গেট করতে হবে। এই ভোটটা বিজেপির দিকে এলে রাজনৈতিকভাবে বিজেপি আরও শক্তিশালী হবে। এদিন এনআরসি নিয়ে আলাদা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসির কাজ দ্রুত করতে হবে। অনুপ্রবেশ রুখতে এনআরসি চালুর দাবি রাখা হয়েছে কর্মসমিতির রাজনৈতিক প্রস্তাবেও।
The post লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় দলের রাশ নিজের হাতেই নিচ্ছেন অমিত শাহ appeared first on Sangbad Pratidin.