সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাম্প্রদায়িক হিংসায় বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লি, শ্মশানের নিস্তব্ধতা ঢেকেছে রাজধানীকে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে পুড়েছে একের পর এক বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল-কলেজ। এই হিংসার বলি ৪৩ জন, আহত প্রায় তিনশো। হিংসার আগুনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিল্লির মউজপুর, শিব বিহার, খেজুরিখাস, জাফরাবাদ এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষেরা একে একে ফিরে এসেছেন ভিটের টানে। কিন্তু, কোথায় কী? আগুন আর আন্দোলনের গ্রাসে পুড়েছে তাদের শেষ সম্বলটুকু। রবিবার বাড়ি ফিরে উন্মত্ত জনতার রোষের অবশিষ্ট চিহ্ন দেখে চোখের জল ফললেন ষাটোর্ধ্ব বিলকিস বানো। গত সোমবার আন্দোলনের তোড় দেখে বাড়ি ছেঁড়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছিলেন তিনি। এদিন ফিরে এসে দেখলেন পড়ে আছে শুধু দরজার পোড়া কাঠটি।
৩৫ বছর শিব বিহারের এই বাড়িতে কাটিয়েছেন বিলকিস। বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে এটাই ছিল তার সাধের সংসার। তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন বাড়িটিকে। সাজিয়ে ছিলেন বাড়ির নিচের ছোট্ট দোকানটি। সোমবার সেই সব ছেড়ে পালাতে গিয়ে পিছুটানে একবার তাকিয়ে ছিলেন বাড়িটির দিকে, পড়েও যান দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে। কাঁপা গলায় বিলকিস জানান, ‘এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে বের হই। উন্মত্ত জনতা আমাকে ধরে ফেলেছিল। হামলাকারীরা সর্বত্র দৌঁড়ে বেড়াচ্ছিল, বাড়িঘর, দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল। আমি হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে পালাতে যাই। আমার বড় ছেলে মহম্মদ ইউসুফ আমাকে খুঁজে পায়। তারপর ভিড়ের বাইরে টেনে নিয়ে এসে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।’ বিলকিসের দোতলা বাড়ি এবং দোকান ছাই হয়ে গিয়েছে আগুনে। নিজের দুই ছেলে এবং পুত্রবধূদের সঙ্গে নিয়ে হামলার পরে পাশের এক মাজারে আশ্রয় নিয়েছেন বিলকিস। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (CAA) পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে যে বিশাল হিংসা ছড়িয়ে পড়ে তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল শিববিহার! প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উন্মত্ত জনতা এসে সব তছনছ করে দেয়, চোখের সামনে যা ছিল তাতেই আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। কয়েকশো পরিবার এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
[আরও পড়ুন:CAA বিরোধী আন্দোলনে রবিবারও উত্তপ্ত মেঘালয়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩]
শিব বিহারের পাশেই যমুনা বিহার অঞ্চল। ৩৩ বছর বয়সী প্রীতি গর্গের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। সেই দিনগুলোর কথা তুলতেই তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছে, দাঙ্গাবাজরা কীভাবে তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। তার ৫ এবং ৯ বছরের দুই ছেলের জীবন বাঁচাতে একতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিনি। প্রীতি বলেন, ‘ওরা বেছে বেছে আমাদের বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। সিঁড়িতে আগুন লেগে যাওয়ায় একতলার ছাঁদ থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে ঝাঁপ দিই।’ ইতিমধ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) নিয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে ১৫০-র বেশি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কিছু অংশে নিষেধাজ্ঞা তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হচ্ছে ধীরে ধীরে।
[আরও পড়ুন:হিন্দু সেনার হুমকির পরই সতর্ক দিল্লি পুলিশ, শাহিনবাগে ফের ১৪৪ ধারা জারি]
The post ‘প্রাণ বাঁচাতে একতলা থেকে লাফ দিই’, এলাকায় ফিরে স্মৃতিচারণ দিল্লির ভিটেহারা মহিলার appeared first on Sangbad Pratidin.