বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: তিনি নারী, তিনি শক্তি, আবার তিনিই মাতৃস্বরূপা। আর পাঁচজন গ্রাম্য সাধারণ নারীর মধ্যেও সুপ্ত দশভুজার শক্তি। সেই শক্তিই এবার প্রতিমার ‘থিম’। অন্য রূপে দেবী দুর্গাকে রূপদান করে এটাই তুলে ধরার চেষ্টা করলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির মৃৎশিল্পী পল্লব ভৌমিক। তাঁর নির্মিত দেবী দুর্গার হাতে তাই অস্ত্র নয়, দশ হাতে থাকছে দশ রকমের ত্রাণসামগ্রী।
দেবী দুর্গা এখানে বাস্তবের মা। পুরাণে বর্ণিত দেবীদুর্গার ৯ টি রূপ নবদুর্গা নামে খ্যাত। শরৎকালে তিনি মহিষাসুরমর্দিনী রূপেই পূজিতা হয়ে থাকেন। হয় কুমারী পুজোও। যদিও বাস্তবের ‘দুর্গা’কে অনেক লাঞ্ছনা, অত্যাচারের শিকার হতে হয়। তাই বাস্তবে নারী শক্তির জাগরণ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন শিল্পী নিজে। সেই নারীশক্তির রূপকেই তুলে ধরতে চেয়েছেনতিনি। পল্লব ভৌমিকের তৈরি ফাইবার গ্লাসের দুর্গা প্রতিমার রূপ এক অতি সাধারণ গ্রাম্যনারীর মতো। প্রথমে মাটি দিয়ে তৈরি করে ডাইস বানিয়ে ফাইবার গ্লাসের দেবী প্রতিমা তৈরি করেছেন তিনি। যে প্রতিমার অঙ্গের রূপ গৌরবর্ণ নয়, মৃত্তিকার মতো। দেবী নয়, এক সাধারণ নারীকেই দশভুজারূপে দেখা যাবে। আরও বিশেষত্ব, এই নারীর দশ হাতে কোনও অস্ত্র নেই, রয়েছে ত্রাণসামগ্রী, যা এই সংকটের সময়ে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
[আরও পড়ুন: করোনা কালে চারণকবি মুকুন্দ দাসের স্মৃতিবিজড়িত পুজোর প্রথায় কাটছাঁট, মনখারাপ স্থানীয়দের]
প্রায় ২ মাস ধরে পল্লব ভৌমিক তৈরি করেছেন তাঁর কল্পভাবনার এই দুর্গা। তা এবার ঠাঁই পেতে চলেছেন বেহালায় বড়িশা ক্লাবের পুজো (Durga Puja) মণ্ডপে। সহজে বহনযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণের জন্য ফাইবার গ্লাসে তৈরি কাঁচামাটির রঙের সাদামাটা আটপৌরে দেবীই থিম শিল্পী পল্লব ভৌমিকের। দুর্গার মতই ওই শিল্পীর তৈরি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশেরও সাদামাটা রূপ। শিল্পীর কথায়, ”করোনা পরিস্থিতিতে এইবার দেবী প্রতিমার হাতে থাকছে না কোনও অস্ত্র । তার বদলে থাকবে ত্রাণসামগ্রী।” কলকাতার বেহালার ওই পুজো কমিটি শিল্পী পল্লব ভৌমিকের ভাবনাকেই গুরুত্ব দিয়েছে। খুব শীঘ্রই ওই প্রতিমা রওনা দেবে বেহালার উদ্দেশে।