সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধীদের তুমুল হট্টগোলের জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ বললেন, যাঁরা আজ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, ভুলে গেলে চলবে না তাঁদের আমলেই কালো টাকা ও দুর্নীতির সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছিল৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে নোট বিতর্কে শাসক ও বিরোধীদের চাপানউতোরে তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্যসভা৷ পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয় যে বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শুরুতে দফায় দফায় রাজ্যসভা স্থগিত রাখতে হয়৷ বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে সারাদিনের জন্য মুলতবি হয়ে যায় লোকসভা৷ আলোচনা থেকে পালাতে চাইছে বিরোধীরা, এই অভিযোগেও এদিন সরব হয়েছেন জেটলি৷
নোট বদল ইস্যুতে এককাট্টা হয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ডাকা বৈঠক এদিন সকালেই বয়কট করে দেয় তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি৷ এদিনের অধিবেশনের ফাঁকে সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব৷ ছিলেন সপা-র সাংসদরাও৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অখিলেশের এই সাক্ষাত্ ঘিরে দিল্লিতে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে৷ একইসঙ্গে অখিলেশ এদিন জানান, দ্রুতই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি৷
এদিন রাজ্যসভায় মনমোহন সিং প্রথম বলতে উঠে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিবৃতি দাবি করলে তাঁকে বলতে বাধা দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “যখন সময় আসবে প্রধানমন্ত্রী তখন বলবেন৷” এর প্রতিবাদে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রশ্ন করেন, “উনি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী৷ ডেপুটি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে বিবৃতি দিতে উঠেছিলেন৷ ওঁকে বাধা দেওয়া হয়ে কীভাবে?” এরপর রাজ্যসভা ফের শুরু হলে অরুণ জেটলি আশ্বাস দেন, এদিনই বিবৃতি দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ততক্ষণে রাজ্যসভায় ঢুকেও পড়েন মোদি৷ এরপরই তাঁর উপস্থিতিতে শুরু হয় নোট বিতর্ক নিয়ে আলোচনা৷ মোদি সরকারকে তোপ দেগে তখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, “নোট বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই৷ তবে নোট বাতিলের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল৷ যেভাবে নোট বাতিল করা হয়েছে তাতে দেশজুড়ে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে৷ মানুষ নিজেই নিজের টাকা তুলতে পারছেন না৷ এর পরিণতি কী কেউ জানে না৷ ইতিমধ্যেই নোট দুর্ভোগে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এর ফলে লুঠকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে৷ ভুল-কে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷” মোদিকে নিশানা করে মনমোহন আরও বলেন, “আর্থিক বৃদ্ধির হার দুই শতাংশ পড়তে পারে৷ প্রধানমন্ত্রী বলছেন ৫০ দিন সময় দিন৷ কিন্তু ততদিনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মার খাবে৷ এই পরিবর্তনের ছাপ রোজই প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার উপর খুব খারাপভাবে পড়ছে৷” এরপরই নোট কাণ্ডে বিরোধী দলের নেতৃত্বে থাকা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ‘নোট বাতিলে দেশে আর্থিক জরুরি অবস্থা চলছে’ উল্লেখ করে প্রতিবাদে সরব হন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন৷
অন্যদিকে লোকসভায় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানোর সময় অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজনের দিকে কাগজ ছিঁড়ে উড়িয়ে দেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অক্ষয় যাদব৷ এরপরই তাঁকে সতর্ক করে সারাদিনের জন্য মুলতবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন৷ বৃহস্পতিবার সকালে সংসদে নিজকক্ষে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন রাজনাথ৷ কিন্তু বিরোধী দলের নেতারা সেই বৈঠকে না গিয়ে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের ঘরে বৈঠক করেন৷ বিরোধীদের দাবি ছিল, সব দলকে না ডাকলে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক করা হবে না৷ আলোচনা চাইলে সরকারকে ১৫টি বিরোধী দলকেই ডাকতে হবে৷ বিরোধীদের অভিযোগ, সর্বদল বৈঠকের নাম করে রাজনাথ শুধুমাত্র প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন৷ সংসদ সচল রাখার জন্য আবেদন করতেন তিনি৷ এদিন গুলাম নবি আজাদের ঘরে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ২৮ নভেম্বর সকালে তারা পরবর্তী বৈঠক করবে৷ সেখানে সরকার বিরোধী পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে৷
The post মনমোহনের আমলেই কালো টাকার রমরমা, বিরোধীদের পাল্টা জেটলির appeared first on Sangbad Pratidin.