চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: খেলার জন্য ছেড়েছিলেন নিজের ঘর। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ছাড়তে হয়েছে শ্বশুরের ভিটেও। তবু অদম্য জেদ নিয়ে অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অ্যাথলিট শ্যামলী সিং। জামুড়িয়ার বাসিন্দা ৩০ বছরের ওই যুবতীর গতি আপাতত থমকে ব্রেন টিউমারের (brain tumor) জন্য। আর্থিক সংকটে পড়ে আটকে এই রোগের চিকিৎসাও। পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক যে চিকিৎসা আর অস্ত্রোপচারের জন্য জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্তরে অর্জিত অমূল্য পদকগুলিও বিক্রি করতে হতে পারে। তাই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন শ্যামলী।
জামুড়িয়া থানার অন্তর্গত কুনুস্তোড়িয়া কাঁটা মোড়ের বাসিন্দা শ্যামলী সিং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের স্প্রিন্টার। এখনও পর্যন্ত তিনি ১০৮টি পদক ও ৮০টিরও বেশি ট্রফি এনেছেন দেশ এবং রাজ্যের জন্য। আসন্ন অলিম্পিকের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর ব্রেন টিউমার হয়েছে। খুব দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারে বাদ সাধছে অর্থ। অসহায় অবস্থা ক্রীড়াবিদের। দেশের জন্য পদক জিতেও এমন কঠিন সময়ে ভীষণ একা অনুভূত হচ্ছে তাঁর।
[আরও পড়ুন: রোহিতের রেকর্ড গড়ার দিনে চর্চায় মনীশের অবিশ্বাস্য ক্যাচ, দেখুন ভিডিও]
শ্যামলী সিং বলেন, “আমি সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। মেয়ে হিসেবে খেলাধুলো করা, বিশেষ করে দৌড়টা পছন্দ করেননি বাড়ির অনেকেই। তাই বিশিষ্ট অ্যাথলিট, কোচ সন্তোষ সিংকে বিয়ে করেই বাড়ি ছেড়েছিলাম। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আবার চেয়েছিলেন আমি গৃহবধূ হিসেবেই থাকি।” কিন্তু শ্যামলী ও তাঁর স্বামীর ইচ্ছে ছিল, অ্যাথলিট (ওূপতাূা) হিসেবে দেশ ও রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করা। ফলে শ্বশুরবাড়িতেও ঠাঁই হয়নি তাঁর।
বর্তমানে এক চিলতে ভাড়ার বাড়িতে বাস স্বামী-স্ত্রীর। কিন্তু ব্রেন টিউমারে হঠাৎই থমকে গেল জীবনের গতি। শ্যামলীর কথায়, “সকলের কাছে আর্থিক সহযোগিতার জন্য হাত পেতেছি। কিন্তু সাহায্য মেলেনি। ভাল খেলার জন্য রাজ্যপালের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। রাজ্য ম্যারাথনে গত দু’বছর ধরে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও পুরস্কার পেয়েছি। দেশের জন্য খেলছি তবু সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না কেউ।” জামুড়িয়ার বিডিও কৃশানু রায় বলেন, বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। যতদূর সম্ভব চিকিৎসার জন্য সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে। জামুড়িয়ার বিধায়ক জাহানারা খানও জানান, এমন উজ্জ্বল প্রতিভাকে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সবাই শ্যামলীর পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করবে।