সুরজিৎ দে, অশোকনগর: একটি বেসরকারি সংস্থার আইটি কর্মী হিসাবে ১ মার্চ সুদানের রাজধানী খার্তুমে যাই। ওখান থেকে ফেরার কথা ছিল ১৯ এপ্রিল। প্রথমদিকে সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎই তাল কাটে ১৫ই এপ্রিল। দেশ কার দখলে থাকবে এনিয়ে সেনা এবং আধা সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। আর আমরা দশজন যে হোটেলে ছিলাম সেখানেই আটকে পরি। তবে প্রথমে বুঝতে পারিনি যুদ্ধ বেঁধেছে।
প্রথমে শুনেছিলাম কিছু প্রতিবাদীকে গুলি করা হয়েছে। পরে খবর দেখে গৃহযুদ্ধের বিষয়টি জানতে পারি। প্রথমদিন থেকেই হোটেলের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুদিন হোটেলের মজুত থাকা খাওয়ার খেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরই শুরু হয় সমস্যা। একদিকে সারাদিন হোটেলের বাইরে গুলির লড়াই, মৃত্যু। আর হোটেলের মধ্যে খাবার, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের সংকট। ডিজেলের কমতি থাকায় হোটেলের জেনারেটরও সবসময় চালানো যাচ্ছিল না। দিনে খুব বেশি হলে এক ঘণ্টা চালানো হতো। সেই সময়ই মোবাইল চার্জ এবং অন্যান্য কাজ সারতে হত। আর খাওয়ার বলতে বিস্কুট কিছু শুকনো খাওয়ার অথবা শুধু ভাত। অশোকনগরের বাড়িতে ফেরার জন্য ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলাম। এরইমধ্যে পাশের হোটেলে বিমান হামলা হয়। এতদিন তাও হোটেলের বাইরে গুলির লড়াইয়ে চলছিল। এখন সরাসরি এয়ার স্ট্রাইকের ঘটনা ঘটায় ঠিক করি আর এক মুহূর্ত হোটেলে থাকা যাবে না। যেভাবেই হোক দেশে ফিরতে হবে। তাতে রাস্তায় মৃত্যু হলে হবে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে উত্তপ্ত বেলেঘাটা, কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, চলল ‘গুলি’]
এরপরই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে পোর্ট সুদানে যাব বলে ঠিক করি। তারজন্য একটি বাস ভাড়া করি। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০ লক্ষ ভাড়া চায়। আমরা হোটেলে থাকা ১০জন, ওই হোটেলেরই ২০জন ভারতীয় কর্মী এবং পার্শ্ববর্তী আরও কয়েকজন মিলে মোট ৩৯ জন কমবেশি ৩০ হাজার টাকা করে দিয়ে বাসটি ভাড়া করি। এরপর ২৪ তারিখ ভোরে বাসে করে রওনা দিই। মাঝেমধ্যেই বাস থামিয়ে চেকিং করছিল আরএসএফের সশস্ত্র জওয়ানরা। সেই সময় যে কোনও মুহূর্তে তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হলে বিপদ ঘটতে পারত। শেষে ওইদিন সন্ধেয় পোর্ট সুদানে পৌঁছে কিছুটা স্বস্তি মেলে। পোর্ট সুদান থেকে ভারতীয় দূতাবাস ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে করে ২৫ এপ্রিল সৌদি আরবের জেড্ডায় পৌঁছই। এরপরে জেডডা থেকে পণ্যবাহী বিমানে করে ২৬ তারিখ রাতে দিল্লি। পরেরদিন ২৭ তারিখ বিমানেই সকালে কলকাতা থেকে অশোকনগরের বাড়িতে ফিরি।