রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: শারদোৎসবে (Durga Puja 2023) শামিল অসুরাও! উত্তরের পিছিয়ে থাকা এক জনজাতি ‘অসুর’। দীর্ঘদিন আদিবাসী জনজাতির এই মানুষেরা বিশ্বাস করে আসছেন, দেবীদুর্গা তাঁদের পূর্বপুরুষ মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। সেই কারণে দুর্গাপুজোয় তাঁরা শামিল হতেন না। দুর্গাপুজোর চারদিন নিজেদেরকে ঘরবন্দি করে রাখতেন অসুর সম্প্রদায়ের আট থেকে আশি সকলেই। কিন্তু সময় পালটেছে। আর তাই এবার দুর্গাপুজোয় শামিল হচ্ছেন অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। দুর্গাপুজো তো শুধুই বৈদিক দেবীর বন্দনা নয়, বরং বিশ্বাস ও আচার নিরপক্ষেভাবে একটি সামাজিক উৎসবও। আর তাই উৎসবের যে রোশনাই, তার টানেই শারদোৎসবে শামিল হচ্ছেন অসুর জনজাতির সাধারণ মানুষ।
আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া মাঝের ডাবরি চা বাগান। এই চা বাগানেই থাকেন সত্তরোর্ধ্ব লুনিস অসুর। একসময় পুজোর চারদিন নিজেকে ঘরবন্দি রাখতেন। কিন্তু এখন শুধু ঘর থেকে মুখ বার করেন না, বরং দুর্গা প্রতিমা মুখ দেখতে মণ্ডপেও যান। লুনিস অসুর বলেন, “একসময় দুর্গাপুজোর সময় বাড়ি থেকে বের হতাম না। কিন্তু এখন পুজোর সময় মণ্ডপে যাই। আমাদের এলাকায় সব বড় বড় দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। আমার এক নাতি তো জংশনের ক্লাবের দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা।” শুধু মাঝের ডাবরি চাবাগান নয়, উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটা, বানারহাট, মেটেলি-সহ কিছু এলাকায় অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করেন। মূলত চা বাগানেই কাজ করেন এই এই জনজাতির মানুষেরা।
[আরও পড়ুন: ককপিটে বসে রশ্মিকার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেন রণবীর! ছবি ভাইরাল হতেই হইচই]
যেহেতু পুরাণ আর ইতিহাস এক নয়, তাই মহিষাসুর বধের ঘটনাকে ঐতিহাসিক বলে ধরে নেওয়ার বিষয়ে বিষয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মিথ ইতিহাস পূর্ব ইতিহাসের প্রতীকী ইশারা। তাই বঙ্গে আর্য আগমন ও ভূমিসন্তান অনার্যদের সঙ্গে তাদের সংঘাত ও অনার্য প্রতিরোধের আখ্যানের নিরিখে মহিষাসুর বধের ভিন্ন বয়ান প্রচলিত ভূমিসন্তানদের মধ্যে। বিশেষত অসুর জনজাতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
তবে অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা যে অনার্য জনগোষ্ঠীর মানুষ তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। স্থানীয় জনজাতি গবেষক প্রমোদ নাথ বলেন, “অসুর সম্প্রদায়ের কথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পৌরাণিক অসুরের সঙ্গে এই অসুর সম্প্রদায়ের কোনও যোগসুত্র পাওয়া যায়নি। তবে এটা ঠিক এই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষদের বিশ্বাস, তারা দুর্গার হাতে বধ হওয়া অসুরের বংশধর। সেই কারণে তারা দুর্গা ঠাকুরের মুখ দেখতেন না। শুধু তাই নয়, দুর্গা পুজোর সময় অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা শোকের গান গাইতেন। সেই গান গাওয়ার রীতি আজও চালু আছে। তবে এখন অসুর সম্প্রদায়ের অনেক মানুষই দুর্গাপুজোয় শামিল হচ্ছেন।’’
[আরও পড়ুন: স্টার নয়, ‘মাটির মানুষ’, এসি গাড়ি ছেড়ে টোটো চড়েই শুটিংয়ে যেতেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়]
দুর্গাপুজোয় শামিল হতে সওয়াল করেন এই মানুষেরা। মাঝের ডাবরি চা বাগানের মীরা অসুর বলেন, “চা বাগানে দুর্গা পুজোর বোনাস পাই। সবাই নতুন জামা কাপড় কেনে। শহরে ঠাকুর দেখতে যায়। আমার ছেলে মেয়েটা কী দোষ করল যে ওদের বাড়িতে আটকে রাখব! এখন আমরা সবাই দুর্গাপুজোয় আনন্দ করি।’’