সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ ছিল 'ভারতবন্ধু'। কিন্তু মহম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর কূটনীতির ময়দানে বদলে গিয়েছে সেই সংজ্ঞা। একাত্তরের গণহত্যা, ধর্ষণ এই সমস্ত কিছুর কালো অধ্যায় ভুলে গিয়ে 'নতুন' বাংলাদেশ এখন আলিঙ্গন করছে পাকিস্তানকে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস মজে 'পাক প্রেমে'। ইসলামাবাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে ঢাকা। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে প্রতিরক্ষা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। দেশে ভারত বিরোধিতার হাওয়া তুলে এখন আরও বেশি করে পাকিস্তানের থেকে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়াচ্ছে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। এবার বাংলাদেশকে ৫০ হাজার টন চাল দিচ্ছে পাকিস্তান। কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন, ইউনুসের 'ভারত বিদ্বেষে'রই কি পুরস্কার?
শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ তুঙ্গে। পাশাপাশি হিন্দু নির্যাতন, অনুপ্রবেশ এরকম একাধিক বিষয়ে দুদেশের সম্পর্কে ফাটল বাড়ছে। আর এই ঘোলা জলেই মাছ ধরতে নেমে পড়েছে পাকিস্তান। হাসিনাহীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে তৎপর ইসলামাবাদও। এএনআই সূত্রে খবর, সোমবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, 'পাকিস্তান-বাংলাদেশ দুদেশই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়। ঢাকার অভিজাত গুলশন ক্লাবে একটি প্রদর্শনী হবে। সেখানে অংশ নেবেন পাকিস্তানের মহিলা ব্যবসায়ীরা। তাঁরা নিজেদের পণ্য প্রদর্শন করবে। খুব শীঘ্রই তাঁরা ঢাকা আসবেন।'
বাংলাদেশে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। চাল, আলু, চিনি, ডিম, কাঁচালঙ্কার মতো নানা জিনিস কিনতে হাত পুড়ছে আমজনতার। টানাপড়েন সত্ত্বেও পড়শি দেশের দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছে ভারত। সম্প্রতি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল রপ্তানি শুরু করেছে দিল্লি। কিন্তু পাকিস্তানের থেকেও চাল আমদানি শুরু করতে চলেছে ঢাকা। এনিয়েও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'আমাদের দুই সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি করছি। শীঘ্রই তা চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে।' এছাড়া বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "পাকিস্তানের চুড়িদারের খুবই চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে।" তিনি আরও জানান,"বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্যের রপ্তানি করে পাকিস্তান। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ১০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি পাকিস্তানে। খুব তাড়াতাড়ি দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। আগামী এপ্রিলে ঢাকায় আসবেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশহাক দার।"
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নানাপ্রান্তে মার খাচ্ছে হিন্দুরা। কিন্তু পাক নাগরিকদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে ইউনুস সরকার। বিশ্বের যেকোনও জায়গায় থাকা পাকিস্তানের নাগরিক ও বংশোদ্ভূতরা যাতে সহজে ঢাকার ভিসা পান তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকদিন আগেই চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে পাক জাহাজ। ব্যবসার ক্ষেত্রেও পড়শি দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশের বাজার খুলেছে ঢাকা। ২৪ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় বৈঠক সেরে গিয়েছে। সরাসরি আকাশপথেও যুক্ত হল হয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান। ঢাকা-করাচি সরাসরি উড়ান পরিষেবা চালুর অনুমোদন দিয়েছে ইউনুস সরকার। ‘ফ্লাই জিন্না’ এয়ারলাইন্সের আওতায় এই পরিষেবা চালু হবে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউনুসের 'ভারত বিদ্বেষে'ই এখন হাতিয়ার পাকিস্তানের। তাই ঢাকাকে খুশি করতে তারাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তানে সফরে যান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। ইসলামাবাদে বৈঠকে বসেন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে। সেখানেই অত্যাধুনিক জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন হাসান। এরপর গত ২১ জানুয়ারি সূত্র মারফৎ জানা যায়, পাকিস্তানের চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের সেনার প্রতিনিধি দল ঢাকায় গিয়েছে। সেই দলেই ছিলেন আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম, ও আর এক অফিসার। বাংলাদেশের সেনার অফিসারদের সঙ্গে নাকি বৈঠকও করেছেন তাঁরা। তবে এই গোপন সাক্ষাতের বিষয়ে মুখে কুলুপ দুদেশের। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই ‘আঁতাত’ মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছে না নয়াদিল্লি।
