সুকুমার সরকার, ঢাকা: ২৩ বছর আগে ভুল করে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা আজবার পিয়েদা। রবিবার অসমের তেজপুর জেলে এসে ৫৫ বছরের ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে গেলেন তাঁর ছোট ভাই ইকবাল। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণেই ওই ব্যক্তি ভারতে প্রবেশ করেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তেজপুর সেন্ট্রাল জেল সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, আজবার পেয়াদা বর্তমানে সুস্থ আছেন। আগামী মাসে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
দাদা যখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন তখন ৫ বছর বয়স ছিল ইকবালের। তাই ওই সময়ের কথা খুব ভাল করে মনে নেই তাঁর। শুধু মনে আছে, অনেক খোঁজ করেও ছেলের সন্ধান পাননি তাঁর বৃদ্ধ বাবা আবদুল করিম পিয়েদা ও মা মোমেন খাতুন। এদিকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১ জুলাই অসমের ধেমাজি জেলা থেকে আজবারকে আটক করা হয়। এরপর ভারতীয় পাসপোর্ট আইন ও ফরেনার্স আইনের আওতায় ওই বছরের ১৬ নভেম্বর জেলে পাঠানো হয় তাঁকে। তবে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর তেজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো তাঁকে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া।
[আরও পড়ুন-সৌদি যাওয়ার পথে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আটক ৫ রোহিঙ্গা]
কিন্তু, মানসিক অসুস্থতার কারণে নিজের দেশ ও ঠিকানা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারছিলেন তিনি। তাই দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাকে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। এরপর কারাগার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আজবারের মানসিক রোগের চিকিৎসা শুরু হয়। তাতে সাড়া দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন আজবার। অন্যদিকে তিনি যে অসমে আছেন তা জানতে পারেন তাঁর ভাই ইকবাল পিয়েদা। আজবারকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী অমলেন্দু দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ওই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে দাদার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হন।
[আরও পড়ুন-ধর্ষণের পর যুবতীর নগ্ন ছবি স্বামীর কাছে পাঠাল অভিযুক্ত]
অমলেন্দু দাস যোগাযোগ করেন গুয়াহাটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার শাহ মহম্মদ তানভির মনসুরের সঙ্গে। অবশেষে রবিবার ডিটেনশন ক্যাম্পে গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন ইকবাল। দীর্ঘ দু’দশক পর হারিয়ে যাওয়া দাদাকে কাছে পেয়ে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তিনি। ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদও জানান। বলেন, “আমার মা বলেছিলেন দাদা মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন এবং ২৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান। আমি যখন একেবারে ছোট ছিলাম, ভাই তখন যেভাবেই হোক ভারতে প্রবেশ করেন। এত বছর পর তাঁকে সুস্থ দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। এর জন্য ভারত সরকার ও জেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
তেজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মৃন্ময় দাওকা জানান, “আজবার এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। বাংলাদেশে তাঁর পরিবার ও ঠিকানা সম্পর্কে লিখতে পারে। প্রত্যর্পণ সম্পর্কিত সমস্ত নথি তৈরি কাজ শেষ হয়ে গেলে আগামী মাসেই আজবারকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে।” গোটা ঘটনায় আজবার নিজেও খুব খুশি। তিনি বলেন, “আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই। মা ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছি।”
The post অতীতের ভুল বর্তমানে সংশোধন, ২৩ বছর পর ফিরছেন ভারতে ঢুকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিক appeared first on Sangbad Pratidin.