অর্ণব আইচ: স্বল্পবাস। শরীরেও চটক। শীতের সন্ধ্যায় শহরের পানশালা মাতিয়ে তুলছে দিল্লি ও হরিয়ানার ‘দেশি গার্ল’রা। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে বঙ্গললনাদের।
শীত মানেই শহরে উৎসব আর তার সঙ্গে ভিড় পানশালায়। কিন্তু মদিরার গ্লাস হাতে নিয়ে সুখের আবেশে ভেসে যাওয়াটাই শেষ নয়। তার সঙ্গে মন মাতায় পানশালার সুন্দরীদের গান। বাঙালি যুবতীদের কণ্ঠ টেনেছে বহু শহরবাসীকে। তাঁদের গানের গলাই বারবার টেনে নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে বহু মানুষকে। সুর আর মদিরায় বিভোর হয়ে সুন্দরীদের ‘এজেন্ট’দের হাতে টাকা গুঁজে দিয়েছেন পানশালার খদ্দের। ছোট্ট চিরকুটে লিখে দিয়েছেন নিজের পছন্দমতো গানের লাইন। সেই ফরমায়েশ অনুযায়ী গান গেয়ে উঠেছেন সুন্দরী। বিক্রি বেড়েছে পানশালার। রোজগার বেড়েছে ব্যান্ড মাস্টারদের, যাঁরা সুন্দরীদের নিয়ে এসেছেন পানশালায়।
মধ্য কলকাতার এক নামী পানশালার ব্যান্ড মাস্টার জানান, কয়েক মাস আগে পর্যন্তও কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু গত বছরের শেষের দিক অর্থাৎ বড়দিনের সময় থেকেই বোঝা গেল, কোথাও যেন কেটে গিয়েছে ছন্দ। বাঙালি সুন্দরীদের গান শুনতে যেন বেশি ভিড় হচ্ছে না পানশালায়। বউবাজার এলাকারই একটি পানশালার ব্যান্ড মাস্টারের কথায়, বাঙালি ‘ক্রুনার’দের বাজার কেড়ে নিচ্ছে দিল্লির ‘দেশি গার্ল’রা। সাধারণত পানশালার বাঙালি সুন্দরীরা স্বল্পবাস পরেন না। বহু পানশালা স্বল্পবাস পরার অনুমতি দেয় না।
[অবশেষে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ বিধানচন্দ্র কলেজের জিএস-এর]
জানা গিয়েছে, ‘দেশি গার্ল’দের সেই সমস্যা নেই। দীর্ঘাঙ্গী ও সুন্দরী ওই ‘দেশি গার্ল’রা স্বল্পবাস পরে। মূলত হিন্দি গান গায় তারা। গানের তালে তালে চলে নাচও। ‘দেশি গার্ল’দের প্রাধান্য রয়েছে, এমন একটি পানশালার এক ব্যান্ড মাস্টারের মতে, একবার এই সুন্দরীদের নাচ ও গান মদিরার গ্লাস হাতে নিয়ে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা আর বাঙালি সুন্দরীদের গান শুনতে যেতে চান না। সেই কারণেই শীতের সন্ধ্যায় শহরের পানশালাগুলি সেজে উঠলেও যেগুলিতে মূলত বঙ্গললনারা রয়েছেন, সেগুলিতে ভিড় তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। যেখানে গত বছরও শীতের উৎসবের রাতগুলিতে বঙ্গললনাদের গান শুনতে পানশালাগুলিতে ভিড় উপচে পড়েছিল, সেখানে এই শীতে সেরকম ভিড় না দেখে ভুরু কোঁচকাচ্ছেন ব্যান্ড মাস্টাররা। বার বার বাইরে গিয়ে দেখেছেন, খদ্দেররা আসছেন কি না। কিন্তু যেখানে ‘দেশি গার্ল’দের পানশালায় ভিড় জমে উঠেছে, সেখানে রাত পর্যন্ত গান গেয়েও সেই ভিড় টানতে পারছেন না বঙ্গ সুন্দরীরা।
জানা গিয়েছে, এই ‘দেশি গার্ল’দের বেশিরভাগই দিল্লি ও হরিয়ানার বাসিন্দা। আবার কেউ বা পাঞ্জাব অথবা উত্তরপ্রদেশের। পানশালার এজেন্টরা ভিনরাজ্যের বিভিন্ন নাইটক্লাব ও ডিস্কোথেকে গিয়ে তরুণীদের সন্ধান চালায়। পছন্দমতো তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে তাদের প্রচুর টাকা রোজগারের টোপ দেয়। কলকাতায় ‘ক্রুনার’ হিসাবে কাজ করলে দিনে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারবে বলেও লোভ দেখানো হয়। এই টোপে পা দিয়ে ভিনরাজ্যের ‘দেশি গার্ল’রা পাড়ি দেয় কলকাতায়। যারা গান জানে, তাদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয়। আবার অনেকে শুধু নাচে। নাচের স্টেপ দেখেও টাকা ওড়ে পানশালায়। বহু ব্যান্ড মাস্টার ফ্ল্যাট ভাড়া করে ভিনরাজ্যের সুন্দরীদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। মদ্যপায়ীরা সুন্দরীদের পিছনে যত টাকা খরচ করে, তার একটি অংশ পান ব্যান্ড মাস্টাররা। আবার অনেক সুন্দরী খদ্দেরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েও বহু টাকা রোজগার করে। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার পানশালায় ‘ক্রুনার’রা গান গাইতে পারেন। কিন্তু নাচতে পারেন না। আগে এই বিষয়ে পানশালার ভিতরে গিয়ে পুলিশ নজর রাখত। কিন্তু এখন আদালতের নির্দেশে পানশালার ভিতরে গিয়ে পুলিশ ‘ক্রুনার’দের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদিও ‘ক্রুনার’দের কেন্দ্র করে যাতে পানশালাগুলিতে গোলমাল না হয়, সেই বিষয়ে নজর রাখা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[ফের চিকিৎসায় গাফিলতিতে বধূমৃত্যুর অভিযোগ, সংকটে নবজাতকও]
The post স্বল্পবসনা না হওয়ায় দর কমছে বঙ্গললনাদের, শহরের পানশালা মাতাচ্ছে ‘দেশি গার্ল’ appeared first on Sangbad Pratidin.