ধীমান রায়, কাটোয়া: “তোরা মাঠে কাজ করতে যাচ্ছিস। প্রয়োজনে চারদিনের মজুরির টাকা আমরা দিয়ে দেব। কিন্তু এই ক’দিন কাজ বন্ধ রেখে পরীক্ষা দিতে চল”, স্কুলছুট পড়ুয়াদের মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় বসার জন্য পড়ুয়াদের কাছে এইভাবে অনুরোধ করে গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের কয়রাপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক ও সহ শিক্ষকরা।
এদিন বুধবার আউশগ্রামের করুঞ্জি, ভাদা, কয়রাপুর ও ভাতারের আমবোনা গ্রামে ঘোরেন স্কুলের শিক্ষকরা। যেসব মাধ্যমিক ছাত্র টেস্ট পরীক্ষা দিতে যায়নি তাদের ও তাদের অভিভাবকদের হাত ধরে বোঝালেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক সতীনাথ গোস্বামী ও
সহ-শিক্ষকরা। আশ্বাস দিলেন, ওই ছাত্রদের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী তাদের বই, খাতার খরচও জোগাবেন শিক্ষকরা। যাতে পড়ুয়ারা স্কুলমুখী হন তার জন্য অনুরোধ করলেন শিক্ষকরা।
[আরও পড়ুন: ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিসিসিআই’, কোহলি বিতর্কে প্রথমবার মুখ খুললেন সৌরভ]
মঙ্গলবার থেকে কয়রাপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কুলে আউশগ্রামের কয়রাপুর, ভাদা, করুঞ্জি ও ভাতারের আমবোনা-সহ বিভিন্ন গ্রাম মিলে প্রায় সাড়ে পাঁচশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। তাদের মধ্যে ৮৩ জন ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক দেবে। টেস্ট পরীক্ষার প্রথমদিনেই দেখা যায় ১৫ -১৬ জন পড়ুয়া পরীক্ষায় বসেনি।
শিক্ষকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই পড়ুয়াদের কেউ মাঠে ধানকাটার কাজে লেগে গিয়েছে, কেউ ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে রুজি-রোজগারের সন্ধানে। করুঞ্জি গ্রামে গিয়ে শিক্ষকরা গিয়ে দেখতে পান এক ছাত্র বাড়ির উঠোনে বসে গরুর খাবার জন্য বিচালি কাটছে। তার পাশে বসে পড়ে অনেক বোঝানো হয় ছাত্রটিকে। প্রধান শিক্ষক সতীনাথ গোস্বামী বলেন, “মূলত তিনটি কারণে কিছু পড়ুয়া পরীক্ষায় বসতে যায়নি। প্রথমত, আর্থ-সামাজিক কারণ, দ্বিতীয়ত, পরীক্ষা নিয়ে মনের মধ্যে ভয় এবং তৃতীয়ত, দু’একজন অসুস্থ থাকার কারণে পরীক্ষায় বসতে যায়নি। আমরা ওদের রাজি করিয়েছি। ওদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া হবে।”
সতীনাথবাবুর কথায়, “আমরা ওই পড়ুয়াদের বলেছি ওদের বই, খাতা সব আমরা দেব। পরীক্ষার ফি নেওয়া হবে না। এমনকী প্রয়োজনে চারদিনের মজুরির টাকাও দিয়ে দেব। যাতে চারদিন পরীক্ষায় বসতে যায়।” জানা যায় কিছু পড়ুয়াদের মধ্যে ছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। স্কুলের এক সহ-শিক্ষক উৎপল বেসরা ওইসব ছাত্রদের সঙ্গে আদিবাসী ভাষায় কথা বলে বোঝান। সতীনাথবাবু বলেন, “আমরা আশাবাদী পড়ুয়ারা ও অভিভাবকরা আমাদের আবেদনে সাড়া দেবেন।”