দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: প্রাক্তন সেনাকর্মীর দেহ উদ্ধারের পর তিনদিন কেটে গেল এখনও উদ্ধার হয়নি কাটা হাত। সোমবার পুকুরে তল্লাশি চালাতে উদ্ধার হল খুনে ব্যবহৃত করাত। মৃতের কাটা হাত দুটির উদ্ধারের চেষ্টায় পুলিশ। বারুইপুর কাণ্ডে একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বারুইপুরের মল্লিকপুরের বাসিন্দা প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। আগেই জেরায় মৃতের ছেলে অর্থাৎ খুনে অভিযু্ক্ত দয় চক্রবর্তী জানিয়েছে, সোমবার আবাসনে খুনের পর বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দেহ ছয় টুকরো করা হয়। তারপর টুকরোগুলো ফেলা হয় এলাকার একটি পুকুর ও ঝোপের মধ্যে। পুকুরের ঝোপ থেকে দেহের বেশ কিছুটা অংশ মিললেও এখনো হাত দুটি পাওয়া যায়নি। পুলিশের অনুমান কোনওভাবে শিয়ালের গর্তের মধ্যে হাত গুলি টেনে নিয়ে যেতে পারে শিয়াল। প্রাথমিকভাবে চারিদিকে খোঁজা খোঁজার পর এমনটাই অনুমান পুলিশের। তবে রবিবারের পর সোমবারের তল্লাশিতে পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত করাত।
[আরও পড়ুন: ‘পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়’, মদনকে বেনজির আক্রমণ ফিরহাদের]
সোমবার ঘটনায় মৃত উজ্জ্বল চক্রবর্তীর ছেলে জয় চক্রবর্তী এবং স্ত্রী শ্যামলি চক্রবর্তীকে বেশ কয়েক প্রস্তুত জেরা করে পুলিশ। ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতে বারুইপুর থানায় আছেন তারা। পুলিশের জেরায় ইতিমধ্যেই অনেক কিছুই স্বীকার করেছে অভিযুক্তরা, এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। খুনের সময় কার কী ভূমিকা ছিল এবং দেহ লোপাটের ক্ষেত্রে কিভাবে মা ছেলেকে সাহায্য করেছিল পুলিশের জেরাতে উঠে এসেছে সেই সব তথ্য। ইতিমধ্যেই তিনটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এই ঘটনায়। মোবাইলের সমস্ত কল লিস্ট ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার ঘটার পর থেকে মা ও ছেলে কার কার সাথে কথা বলেছিল সেগুলির ও তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করছে পুলিশ। অভিযুক্তরা ইতিমধ্যেই খুনের কথা স্বীকার করলেও যেহেতু এই ঘটনা এখনও পর্যন্ত কেউ সাক্ষী নন। তাই পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণই আদালতের কাছে মূল বিবেচ্য বিষয়।
আদালতে নির্দেশমতো দুই অভিযুক্তকে এদিন মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল মা ও ছেলে দুজনেরই। তবে ঘটনায় তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুতাপ নেই। চোখে মুখে ও কোন রকম অনুশোচনার ছবিও ফুটে ওঠেনি। রবিবার আদালতে তোলার সময় নিহত এর স্ত্রী শ্যামলী চক্রবর্তী স্বীকার করেছিল স্বামী মদ্যপ অবস্থায় প্রচন্ড মারধর করতেন। এবং কুড়ি বছর ধরে তাদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছিল। তবে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একটিও কথাও বলেননি। এই ঘটনার পর ইতিমধ্যেই পুলিশের দক্ষিণবঙ্গের এডিজি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা এবং প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি তন্ময় রায়চৌধুরী বারুইপুর থানাতে আসেন। সেখানে এক প্রস্থ তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন। সঙ্গে ছিলেন বারুইপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মিস পুষ্পা। এদিন সাংবাদিতা প্রশ্নের উত্তরে সিদ্ধিনাথ গুপ্তা বলেন, বারুইপুর সোনারপুর মিলিয়ে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে গত এক সপ্তাহে। প্রত্যেকটিতে আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তও খুব দ্রুত এগোচ্ছে। সঠিক পথেই হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এই তিনটি ঘটনার চার্জশিট দিয়ে দেবে পুলিশ।