নব্যেন্দু হাজরা: আবাস যোজনায় স্বচ্ছতায় গুরুত্ব দিয়ে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙল বাংলা। আরও ভালভাবে বলতে গেলে, অন্য রাজ্যগুলিকে অনেকটা পিছনে ফেলে শেষ ল্যাপে টক্কর দিল নবান্ন। একটি দিনে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার আবাস তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই রেকর্ড গত ২৯ ডিসেম্বরের।
বস্তুত আবাস যোজনায় তামাম রাজ্য প্রশাসনকে ব্লকস্তর পর্যন্ত নামানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ ছিল, স্বচ্ছতার প্রশ্নে কোনওরকম আপস করা যাবে না। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সমীক্ষায় নেমেছিলেন জেলাশাসকরা। মুখ্যসচিব নিজে ঘনঘন বৈঠক করেন। ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হলেও প্রথম দু’দিন তেমন সাফল্য আসেনি। কিন্তু ২৮ তারিখ একলপ্তে ২ লক্ষ ৩ হাজার ৫২৮টি বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়। আর তার পরদিনই সেটা ভেঙে যায়। গত ২৯ ডিসেম্বর ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৯৬টি বাড়ির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কেন্দ্রের সূত্র জানিয়েছে, অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে নজির বলতে গেলে অসমের। সেটাও দুই লক্ষ পেরোয়নি, ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫৯২।
[আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবের বাড়িতে আগুন ধরাল ‘জেহাদি’রা, ভাঙচুর গাড়িও]
নবান্নের খবর, গোটা প্রশাসনকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবাস যোজনায় জোর দিতে বলা হয়েছিল। কার্যত ছুটি বাতিলও হয়েছে। রাত জেগে কাজ করেছেন আধিকারিকরা। গত ২৬ ডিসেম্বর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ছ’দিনেই ১০ লক্ষের বেশি বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়। আবাস যোজনায় আবেদন স্ক্রুটিনি ও ভেরিফিকেশনের পর চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়েছে। মুখ্যসচিব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ৩১ মার্চ তথা বর্তমান অর্থবর্ষের মধ্যেই ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়ি বানানোর কাজ সেরে ফেলতে হবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ লক্ষ ১৯ হাজার জনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মানে শতাংশের হিসাবে ৮৯ শতাংশ। বাকি যে ১১ শতাংশ কাজ বাকি, তা দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার পঞ্চায়েত দপ্তরে একটি বৈঠকও হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের সচিব পি উল্গানাথন। সমস্ত নোডাল অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মূলত যাদের জমি সমস্যা রয়েছে, পরিচয়পত্র খুঁজে পাচ্ছেন না, কিংবা বাড়িতে নেই, তাঁদের কাজগুলো কী ভাবে এগোনো যায় এবং কীভাবে অনুমোদন দেওয়া যায়, সেই প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে চাইছে প্রশাসন। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়ার দিন থেকে চল্লিশ দিনের মধ্যে জানালা পর্যন্ত গাঁথনি করে ফেলতে হবে। তার আরও ৩৫ দিনের মধ্যে লিন্টেল পর্যন্ত গাঁথনি সেরে ফেলতে হবে উপভোক্তাদের। এর ১৫ দিন পর বাড়ির কাজ দেখতে ভেরিফিকেশনের জন্য যাবে সরকারি টিম। কিন্তু প্রশাসনের কর্তাদের প্রশ্ন, যেভাবে দ্রুত কাজ এগোনোর কথা বলা হচ্ছে, তার জন্য অর্থের প্রয়োজন। দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের যতটুকু করার আমরা করছি। বাকিটা তো টাকা যেমন আসবে, তেমন এগোবে।’’