সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে পালাবদল পর্বে তাঁরা অনেকেই ছিলেন পরিবর্তনের ‘মুখ’। বাম শাসনের সাধের সৌধ ধসিয়ে দিতে তাঁদের ভূমিকা কম ছিল না। রাজ্যের এক শ্রেণির শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁদের পাশে থাকা। সেই বুদ্ধিজীবীদের একাংশই আজ সরব পঞ্চায়েতে অশান্তি ও মমতা সরকারের ভূমিকা নিয়ে। বুধবার প্রেস ক্লাবে সমবেত হলেন সংস্কৃতি জগতের বহু বিশিষ্টরা। অভিযোগ জানালেন সাম্প্রতিক সময়ের সরকারের কাজ নিয়ে।
[ আসন সংখ্যার তুলনায় দেড়গুণ বেশি প্রার্থী, বিক্ষুদ্ধদের নিয়ে নাজেহাল শাসকদল ]
দিনকয়েক আগেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বুদ্ধিজীবীদের মিছিল দেখেছিল রাজ্য। তার আগে প্রেস ক্লাবে জড়ো হয়েছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সে আসর আবার স্ববিরোধিতা ও ব্যক্তিগত মতবিরোধে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আজ যাঁরা সরকারের কাজের প্রতিবাদ জানালেন, তাঁদের সেদিন দেখা যায়নি। অর্থাৎ রাজ্যের মানুষের কাছে বিভাজন রেখা বেশ স্পষ্ট। রাজ্যে যে বুদ্ধিজীবীরাও দ্বিধাভক্ত, একাধিক স্রোত পাশাপাশি চলছে তা এদিন পরিষ্কার হয়ে গেল। নিশ্চিতই সেদিন বুদ্ধিজীবী হিসেবে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের আদর্শের সঙ্গে কিংবা তাঁদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই বিদ্বজনরা একাত্মবোধ করেননি। তাই পৃথক সভার আয়োজন। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন যাঁরা উপস্থিতি ছিলেন তাঁদের অনেকেই এককালে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তনের মুখ। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়, সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, পল্লব কীর্তনীয়া প্রমুখ। উপস্থিত সভ্যদের কেউ কেউ এককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আনুকূল্যে তৈরি বিভিন্ন সরকারি কমিটিতেও ছিলেন, বেতনও মিলত।
[ মনোনয়ন স্ত্রুটিনিতেও অশান্তি, তৃণমূল-বিজেপি খণ্ডযুদ্ধ পুরুলিয়ার বলরামপুরে ]
তাহলে আজ কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হল যে তাঁদের বিকল্প পথ নিতে হল? বিগত এক দু’বছরে রাজ্যের শিল্পীমহলের চাপা ক্ষোভ মাঝেমধ্যেই প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ সরাসরি মমতার বিরুদ্ধে নয়। তবে সরকারি বা সরকার ঘনিষ্ঠ কারও কারও জন্যে যে তাঁদের স্বাধীন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা তাঁদের মতামত চেপে দেওয়া হচ্ছে, এই আক্ষেপ বেশ কিছুদিন ধরেই শ্রুত হচ্ছিল। এদিন সভায় উপস্থিত বিদ্বজনেরা নাগরিক দায়িত্ব পালন করার বিষয়টিই তুলে ধরলেন। অর্থাৎ তাঁদের বক্তব্য, মনোনয়ন পর্বে যে অশান্তি হচ্ছে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে রাজ্যে। পঞ্চায়েতের জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। তারপরেও বেশ কিছু প্রশ্ন অমীমাংসিত ও উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। দ্বিতীয়ত, ভোটে এক দলের হয়ে জিতে অন্য দলে যোগ দেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। এও আসলে মানুষের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। এক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখতে হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো করে রাখা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনও সক্রিয় নয়। যেরকম সক্রিয় দুবৃত্তরা। এখন ভোটে যে অশান্তি হয় না তা নয়। তবে বিদ্বজনদের বক্তব্য, যে গণ্ডগোল ভোটের দিনে হয় এখন তা মনোনয়নেই দেখা যাচ্ছে। এই যে পরিস্থিতি এর বদল ও পরিবর্তন আবশ্যক। বিদ্বজনদের দাবি, কয়েক বছর আগে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরাই কমিশনের কাছে আরজি জানিয়েছিলেন, এখন আবার সেই পরিস্থিতিই ঘুরে এসেছে। এভাবেই নাগরিক দায়িত্ব তুলে ধরার কথা বলেছেন বিভিন্নভাবে। তবে এককালে যাঁরা পরিবর্তনে সায় দিয়েছিলেন তাঁরা যে এভাবে পালটা পরিবর্তনের ডাক দেবেন তা হয়তো অনেকেই ভেবে উঠতে পারেননি।
The post বদলেছে ‘পরিবর্তনের মুখ’! পঞ্চায়েতে অশান্তি নিয়ে সরব বুদ্ধিজীবীদের একাংশ appeared first on Sangbad Pratidin.