স্টাফ রিপোর্টার, মালদহ: জাতীয় প্রতিরক্ষা অ্যাকাডেমির সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় বাংলাকে গর্বিত করলেন মালদহের অর্ণব দাস। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির (এনডিএ) পরীক্ষায় দেশের সফল ৪৭২ জনের মধ্যে ৬৬তম স্থান দখল করেছেন তিনি। বায়ুসেনার আধিকারিক হিসাবে দায়িত্ব নেবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাবাহিনীতে চাকরির নয়া প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে দেশজুড়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রের এই প্রকল্পের বিরোধিতায় দেশের একাধিক রাজ্যে এখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। অবরোধ, বিক্ষোভ চলছে। কোথাও আবার বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ট্রেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় ফল। মালদহের পরানপুরে বাড়ি অর্ণবের। মালদহ রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র। ২০২১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। মাধ্যমিকেও ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। অর্ণব বলছিলেন, “ইচ্ছে ছিল বায়ুসেনায় চাকরি করব। এক বন্ধুর কাছ থেকে সব কিছু জেনে এনডিএ পরীক্ষায় বসার আবেদন করেছিলাম। গুগল, ইউটিউব ঘেঁটে অনলাইনে পড়াশোনা করি। তবু দু’বার লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সফল হতে পারিনি। কিন্তু তার পরেও হাল ছেড়ে দিইনি। এবার লিখিত, মৌখিক, মেডিক্যাল ফিটনেস, সব পেরিয়ে গিয়েছি। এখন ভারতীয় বায়ুসেনার কমিশনড অফিসার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।” ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য চলে যেতে হবে। তিনবছর এনডিএ-তে সেই প্রশিক্ষণ চলবে। একই সঙ্গে বিটেক কোর্সও সেখানে হবে। তারপর আরও এক বছর এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ হবে। প্রশিক্ষণের সমস্ত খরচ বহন করবে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই কোর্স শেষ করার পরেই বায়ুসেনার পদস্থ আধিকারিক হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে যোগদান করবেন অর্ণব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সমতুল্য পদমর্যাদা হবে তাঁর।
[আরও পড়ুন: অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বারাকপুরে রেল অবরোধ, শিয়ালদহ মেন শাখায় ব্যাহত পরিষেবা ]
অতিকষ্টেই মালদহে বেড়ে উঠেছেন অর্ণব। শৈশবেই স্কুল শিক্ষক বাবা অশোক দাসকে হারিয়েছেন। মা বিপাশা তালুকদার দাস ইংলিশবাজারের জহরাতলা হাই স্কুলে কাজ করেন। একমাত্র বোন অর্পিতা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অর্ণব দাস বলেন, “একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম এই সর্বভারতীয় পরীক্ষা সম্পর্কে আমার এলাকার একজনের কাছ থেকে জানতে পারি। তারপর থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। তৃতীয়বার লিখিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাফল্য পাই। ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পাই। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ কর্নাটকের এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে ইন্টারভিউ হয়। দেশের মোট প্রায় ছয় লক্ষ পড়ুয়া লিখিত পরীক্ষা দেন। লিখিত পরীক্ষা থেকে আট হাজার জন স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পান। চারশো জনের মতো সুযোগ পান। প্রত্যেক বছর দু’বার করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিপাশাদেবী বলেন, “এতটা ভাবিনি কখনও। ওর বাবা যদি এটা দেখে যেতে পারত…!”