সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: জমি হাঙরদের গ্রাস থেকে কিছুই রেহাই পাচ্ছে না, এই অভিযোগ অনেকদিনের। নিউ জলপাইগুড়ি ও রাজগঞ্জ এলাকায় রাতারাতি জমির চরিত্র পালটে গ্রাস করারও অভিযোগ রয়েছে। এবার সেই সিন্ডিকেটের নজরে রামকৃষ্ণ মিশন। রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের কর্তাদের তোয়াক্কা না করেই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জমি মাফিয়ারা। ভূমিদপ্তরের কয়েকজন কর্তার বিরুদ্ধে তাদের মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এর আগে এলাকার কয়েকজন ভূমিকর্তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশও দেন। কিন্তু তার পরও জমি মাফিয়ারা যে এতটুকু দমেনি রামকৃষ্ণ মিশনের উপর হামলার ঘটনায় তা কার্যত স্পষ্ট। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা যুক্ত করার আবেদন জানায় পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর করল জলপাইগুড়ি আদালত।
দলমত নির্বিশেষে এই ঘটনার নিন্দায় সরব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, "এমন ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদের কাউকে রেয়াত করা হবে না। এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো যোগ নেই।" প্রায় তার সুরেই প্রবীণ বামনেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকাগুলোতে জমি মাফিয়ারা তাদের কাজকর্ম চালায়। আমি এমন ঘটনার বিষয়ে বারবার প্রতিবাদ করে এসেছি। আমার মনে হয় না কোন রাজনৈতিক দল এই ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করবে।" যদিও বিজেপির দাবি শাসক দলের মদতপুষ্ট জমি মাফিয়ারা এই ঘটনার পেছনে রয়েছে। তবে তাদের দাবিকে মানতে নারাজ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ। তিনি বলেন, "এমন ঘটনার পেছনে আমাদের দলের কেউ থাকতে পারে না। সমস্তটাই শরিকি বিষয় বলে জানতে পেরেছি।" রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে থানায় যে অভিযোগ জমা করা হয়েছে তাতেও রাজনৈতিক যোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
[আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক শাহরুখের, ভর্তি হাসপাতালে]
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার সেবক রোডের উপর অবস্থিত 'সেবক হাউসে' প্রায় ৩০ জন দুষ্কৃতী ঢুকে রামকৃষ্ণ মিশনের বেশকিছু আশ্রমিক ও নিরাপত্তারক্ষীদের বাইরে বার করে দেয়। প্রত্যেকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকাতে একে একে আশ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রদীপ রায় নামের এক দুষ্কৃতী এই ঘটনার নেপথ্যে ছিল তা জানিয়ে ভক্তিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ। রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে ওই বাড়িতে তাদেরকে মালিকপক্ষ সেবামূলক কাজের জন্য দান করেছেন। এরপর থেকেই সেটি রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল কর্তৃপক্ষের তরফে। জানা গিয়েছে, প্রদীপ রায়ের মা বিদ্দেশ্বরী রায়ের থেকে এই জমিটি কোনো এক সময়ে বাড়ির মালিক কিনেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জমিটি রামকৃষ্ণ মিশনের নামে লিখে দিয়েছিলেন। তবে প্রায় ১৫ দিন আগে জলপাইগুড়ি আদালতে প্রদীপ রায় ওই জমিটির মালিকানা দাবি করে মামলা দায়ের করে। এরপর থেকেই রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পত্তি নিজেদের দখলের নেওয়ার চেষ্টা করছিল প্রদীপ রায় এবং তার কিছু সঙ্গী। রামকৃষ্ণ মিশনের অভিযোগ ১৯ তারিখ শেষ পর্যন্ত জমি দখল করতে ভোরবেলায় সম্পত্তিতে হামলা চালানো হয়, ভেঙে দেওয়া হয় সিসিটিভিও।
মজার বিষয় হল ঘটনার দিন সন্ধ্যেবেলা ভক্তিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার কিছুক্ষণ পর রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ দায়ের করেন প্রদীপ রায়। লিখিত অভিযোগ করে তিনি জানান রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ ওই জমিটির জবর দখল করেছিল। এমনকি তিনি এবং তার মা তফসিলি জাতির হওয়ায় তাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করে মিশন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ও পালটা অভিযোগের এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি ভক্তিনগর থানার পুলিশ। এমনকি ওই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে সিল করে দেওয়া হয়েছে। তাতে জমি মাফিয়াদের সুবিধে হয়েছে বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সমতলের সাধারণ সম্পাদক অত্রি শর্মা বলেন, "আদালতে কোনও মামলা চললেও কোনও বাড়িতে কীভাবে তালা ঝুলিয়ে দেয় তা আমাদের মাথায় ঢুকছে না। আদালতের নির্দেশ ছাড়া এমন ঘটনা হলে আইনত ঠিক নয়। এতে জমি মাফিয়াদের সুবিধে করে দেওয়া হলো বলে আমি মনে করি। তবে সমস্ত বিষয়টি নিয়েই মুখে কুলুপ এঁটেছেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের শীর্ষ কর্তারা।