ধীমান রায়, কাটোয়া: করোনার (Corona Virus) জেরে কোপ পড়েছিল বেসরকারি বিএড কলেজের শিক্ষকের বেতনে। আর্থিক অনটনের প্রভাব পড়েছিল দাম্পত্য জীবনেও। স্বামী-স্ত্রীর সেই মনোমালিন্য এখন বিচ্ছেদের দোরগোড়ায়। এত সমস্যার মাঝেও হাল ছাড়েননি গুসকরা (Guskara) শহরের বাসিন্দা বেসরকারি কলেজ শিক্ষক সৌরভ বারুই। ভ্যান নিয়ে শুরু করলেন ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট। যা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে এলাকায়।
৩৬ বছরের সৌরভ কুমার বাড়ুইয়ের তৈরি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের বিশেষ পদের স্বাদ পাননি এমন লোক গুসকরায় নেই বললেই চলে। এখন গুসকরা শহরের নোওয়াপুকুর পাড় এলাকায় বিকেল হলেই বাতাসে ভেসে আসে ফিশ ফ্রাইয়ের সুবাস। তার টানে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন। ভেটকি, পাবদা, চিংড়ি, ভোলা, সার্টিন, ইলিশ থেকে শুরু করে থাকছে সামুদ্রিক কাঁকড়ার ফ্রাই। পছন্দমতো অর্ডার করলেই কাঁচা শালপাতায় মুড়ে লেবুর রস বা চাটনি মাখিয়ে এগিয়ে দিচ্ছেন সৌরভবাবু। এই ধরনের মাছের পদ সচরাচর মেলে সমুদ্রসৈকত। তবে সমুদ্রসৈকতে কাঁচা শালপাতার প্লেটে খাওয়ার ইচ্ছা হলেও পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু জঙ্গলমহল এলাকা লাগোয়া গুসকরা শহর। তাই টাটকা শালপাতাতেই খাবার পরিবেশন করতে পছন্দ করেন সৌরভবাবু।
[আরও পড়ুন: বিস্তর টালবাহানার পর সিদ্ধান্ত বদল, সামশেরগঞ্জ আসনে লড়তে রাজি কংগ্রেস প্রার্থী জইদুর রহমান]
নিশ্চয়ই ভাবছেন কী নাম বিশেষ এই রেস্তরাঁর? সৌরভবাবু তাঁর এই ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্টের নামও রেখেছেন, ‘ঢেঁকুর।’ গুসকরা শহরের শান্তিপুর এলাকায় বাড়ি সৌরভবাবুর। বাবা মা আগেই মারা গিয়েছেন। প্রায় ৯ বছর ধরে মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) একটি বেসরকারি কলেজে শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষকতা করছেন। পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর। যদিও সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী এখন বাপের বাড়িতে। সৌরভ কুমার বারুইয়ের কথায়, “গতবছর থেকে করোনা আবহে রুজি-রোজগারে টান পড়ায় সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এখন মনে হচ্ছে বিচ্ছেদ হয়েই যাবে। তবে ব্যবসা শুরুর পর যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে শুধু চাকরি ছেড়েও দিতে পারি।”
এখন করোনা আবহে কলেজ বন্ধ থাকায় সপ্তাহে একদিন করে মুর্শিদাবাদ যেতে হচ্ছে সৌরভবাবুকে। বাকিদিনগুলি শুধুমাত্র বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবসা চালান। রোজ সকালে বর্ধমান শহর থেকে মাছ কিনে আনেন। তারপর মশলা বাড়িতেই তৈরি করে গরম গরম ভেজে বিক্রি করেন। মাস তিনেক ধরে এই নতুন ব্যবসা তিনি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই তিনি ব্যবসায় সফল বলে জানান।