সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লকডাউনের শুরুর দিকেও ছবিটা এমন ছিল না। প্রথম দু’সপ্তাহের মধ্যেই রেশন রোষের কারণে শিরোনামে চলে এসেছিল এই জেলা। পণ্য কম মেলায় বিক্ষোভ, অবরোধ, আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশও। এমনকী চার ডিলারকে সাসপেন্ড করার ঘটনাও ঘটেছে। শুধু কী তাই? সোনা, ঘর-বাড়ি, দলিল বন্ধকের মত রেশন কার্ড বন্ধক ছিল মহাজনের কাছে। কিন্তু এখন সেই পুরুলিয়ায় গণবন্টনেই অন্য ছবি। রাজ্যের জেলায় জেলায় রেশন নিয়ে অশান্তি হলেও বনমহল পুরুলিয়ার চিত্রটা একেবারেই উলটো। মাথায় বস্তা-বস্তা চাল নিয়ে এই লকডাউনে উপার্জনহীন মানুষজন যেন অনেকটাই নিশ্চিন্ত।
এর পিছনে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা অপরিসীম। দরিদ্র মানুষজনের বরাদ্দকৃত রেশন হাতে তুলে দিতে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা চড়কির মত ঘুরছেন সব জায়গায়। গত তিন দিনে গণবন্টন ব্যবস্থা দেখতে এই জেলার ২০ টি ব্লকের মধ্যে ১৬টি ব্লক চষে বেড়িয়েছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। বান্দোয়ান থেকে বাঘমুন্ডি। পাড়া থেকে নিতুড়িয়া। তাঁর সঙ্গী ছিল মহকুমা ও ব্লক প্রশাসনের টিম। বান্দোয়ানের নেকড়া গ্রামের বাসিন্দা চারুবালা সিং বলেন, “আমি বাড়িতে একাই থাকি। আমার কার্ডে ১৩ কেজি চাল একবারে পেয়েছি। সেই সঙ্গে আটা। মাস খানেক আর কোন চিন্তা নেই।”
[আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে শামিল পড়ুয়াদের সংগঠন, দুস্থদের হাতে তুলে দিচ্ছে খাদ্যসামগ্রী]
জানা গিয়েছে, রেশন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনকে একেবারে অঙ্ক শেখানোর মত কার্ড পিছু রেশনের বরাদ্দ বুঝিয়েছেন জেলাশাসক। সেই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাঠ তো রয়েছেই। তবে এই জেলার প্রত্যন্ত অযোধ্যা পাহাড়েও রেশন দোকানগুলিতে সামাজিক দূরত্ব পালনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলাশাসকের কথায়, “এখনও পর্যন্ত এই জেলায় চলতি মাসের রেশন আশি শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। আমরা এই কাজটা সঠিকভাবে করে যেতে পারলে এই লকডাউনে সাধারণ মানুষজনের কোন সমস্যা থাকবে না।” তাই সকাল থেকে সন্ধ্যে, এমনকী রাতেও পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে চড়কিপাক খাচ্ছে বিডিওদের টিম। আসলে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র এই জেলায় বরাদ্দকৃত রেশনের নায্য পাওনা এই লকডাউনে মানুষজনের হাতে পৌঁছে দেওয়াটাই যে চ্যালেঞ্জ।
[আরও পড়ুন: ত্রাণ বিলি ঘিরে সংঘর্ষে ধুন্ধুমার কামারহাটি, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে গুরুতর জখম যুবক]
The post লাগাতার রেশন দু্র্নীতির মাঝেই অন্য চিত্র পুরুলিয়ায়, খাদ্যসামগ্রী পেয়ে নিশ্চিন্ত গ্রামবাসীরা appeared first on Sangbad Pratidin.
