shono
Advertisement
Poila Baisakh

'পয়লা বৈশাখে ছেলেকে চেনাব হালখাতা, আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেব ঐতিহ্য'

'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'-এ কলম ধরলেন ফেলু মোদক ফু়ডসের কর্ণধার অমিতাভ দে।
Published By: Biswadip DeyPosted: 07:25 PM Apr 13, 2025Updated: 07:25 PM Apr 13, 2025

বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীতের স্মৃতিচারণা এবং আগামী নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালে লিখলেন ফেলু মোদক ফু়ডসের কর্ণধার অমিতাভ দে

Advertisement

পাঁচ পুরুষের মিষ্টির কারবার। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নববর্ষের দু'দিন আগে থেকেই মিষ্টি তৈরির পর্ব চালু হয়ে যেত। যে মিষ্টি বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। সেই সময় দোকানে দোকানে হালখাতা চালু ছিল। তখন তো ডিজিটাল সিস্টেম আসেনি। আমরাও যেতাম। ময়দা, চিনি, তেল, ঘি, মাখন যা কিছুই কেনা হত এইদিন তাদের ফুল পেমেন্ট করে দেওয়া হত। স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা লাল রঙের হালখাতায় নাম লেখা হত। আবার নতুন করে খাতা চালু হত। মনে পড়ে। বাবার সঙ্গে আমিও যেতাম।

এখন দিন বদলেছে। আমার ছেলের বয়স আট বছর। আমি আর আমার স্ত্রী ঠিক করেছি ওকে এবছর দেখাব হালখাতা জিনিসটা আদতে কী। এখন আর বৈশাখে হালখাতা হয় না। ১ এপ্রিল থেকেই শুরু হয়ে যায় নতুন হিসেব। কাজেই আমরা যদি এখনকার প্রজন্মকে এটা দেখাতেই না পারি তারা তো কোনওদিন জানতেই পারবে না হালখাতা ব্যাপারটা কী। যেখানে নিমন্ত্রণ সেখানে যাওয়া, প্লেটে করে সাদা লুচি, তরকারি খাওয়ানো, সেই সঙ্গে অবশ্যই মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া... বাঙালি কেন আগে দেখেছি অবাঙালিরাও এই প্রথাকে আপন করে নিতেন। এখন সব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। এখন স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গিয়েছে হালখাতা। আগে যারা দু'হাজার প্যাকেট অর্ডার করত, এখন তারা এক-দেড়শোর বেশি প্যাকেট চায় না। আসলে নেহাতই নিজেদের কর্মীদের মধ্যেই তা দেওয়া হয়। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকতাটুকু বজায় রাখা।

পয়লা বৈশাখের আকর্ষণ আমমোহিনী সন্দেশ

তবে তার মানে এই নয় যে, বাঙালিয়ানা বিপন্ন। আমি তা মনে করি না। বাঙালিয়ানা কিন্তু আবার নতুন করে ফিরছে। এখন যত বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ দেখি তত দশ বছর আগেও ছিল না। বড়জোর পাইস হোটেলগুলোতেই লোকে ভাত খেত। কিন্তু পরিবার নিয়ে এসি রেস্তরাঁয় খেতে গেলে লোকে বাঙালি রেস্তরাঁ বেছে নিচ্ছে- এই প্রবণতা গত কয়েক বছরে লাফিয়ে বেড়েছে। ধুতি পরার ঐতিহ্যও অনেকেই ধরে রেখেছেন। বড়বাজারের এক প্রতিষ্ঠানের এবার ১০৫ বছর। আমরা এতগুলো বছর ধরে তাদের মিষ্টি সরবরাহ করে আসছি। এবার তাদের জন্য স্পেশাল স্টিকার তৈরি করেছি আমরা। ওই সংস্থার কর্ণধাররা কিন্তু সকলকে ধুতি-পাঞ্জাবি পরেই অভ্যর্থনা জানান। আজও। এটাই বাঙালিয়ানা। এটা হারাবে না। বরং নতুন করে ফিরে আসছে।

আম রাবড়ি

এবার আসি মিষ্টান্নের কথায়। পয়লা বৈশাখ মানেই আমাদের আম-মিষ্টি শুরু হয়ে যায়। রত্নগিরি থেকে পাকা আম আনিয়ে রেখেছি। নববর্ষ থেকেই মিলবে আমমোহিনী, আমের জলভরা এবং আম-রাবড়ি। লোককে বলি, সাদা লুচি করুন। আম-রাবড়ি ডুবিয়ে খান। অনেকে আবার জানতে চান, এখন কি ফিউশন মিষ্টির কদর বেশি। তাদের বলি, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। হয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে চকোলেট মিষ্টি পছন্দ। কিন্তু তা বলে রসগোল্লা, সন্দেশ, রাবড়ি, ছানার মুড়ির আবেদনে কোনও ঘাটতি পড়েনি। বাঙালি আজও এই সব মিষ্টি খেতে ভালোবাসে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পাঁচ পুরুষের মিষ্টির কারবার। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নববর্ষের দু'দিন আগে থেকেই মিষ্টি তৈরির পর্ব চালু হয়ে যেত।
  • যে মিষ্টি বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। সেই সময় দোকানে দোকানে হালখাতা চালু ছিল।
  • তার মানে এই নয় যে, বাঙালিয়ানা বিপন্ন। আমি তা মনে করি না। বাঙালিয়ানা আবার নতুন করে ফিরছে।
Advertisement