shono
Advertisement

‘কফিন খোলো, বাবার মুখ দেখব’, কাতর আরজি দন্তেওয়াড়ার শহিদের ছেলের

গান স্যালুটে বিদায়। The post ‘কফিন খোলো, বাবার মুখ দেখব’, কাতর আরজি দন্তেওয়াড়ার শহিদের ছেলের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:27 PM Nov 09, 2018Updated: 08:32 AM Nov 10, 2018

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ২টো। ঘরের মানুষটির আসার কথা। চারিদিক ভিড়ে থিক থিক করছে। “আজ বুঝলি তো তোর বাবা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। কতজন এসেছে দেখ।” ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে দিতে অঝোরে কেঁদে চলেছেন। কখনও স্বগতোক্তি করছেন, “আগে তুমি একাই আসতে। কেউ টেরও পেত না। আজ দেখো তোমার আসার প্রতীক্ষায় কতজন রয়েছে।”

Advertisement

বর্ধমানের ইছলাবাদে ঘোষপাড়ায় শহিদের বাড়িতে, রাস্তায় তখন তিলধারণের জায়গা নেই। একটু পরেই সিআইএসএফ জওয়ান শহিদ দীনাঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছায় বাড়িতে। সিল করাই ছিল কফিন। লালশাড়িতে স্ত্রী মিতাদেবী, লাল টি-শার্ট পরা একমাত্র ছেলে দেবজিৎ কফিনের উপর হাত রাখলেন। অনুভব করতে চাইলেন বাবার স্পর্শ। কিন্তু কফিন খোলা হবে শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল দেবজিৎ। কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করে উঠল, “কফিন খোল দিজিয়ে। পাপা কা মু দেখনা হ্যায়।”

[মর্মান্তিক! ভাইফোঁটা দিতে যাওয়ার পথে মৃত্যু মহিলার]

শহিদের দেহ নিয়ে আসা সিআইএসএফ আধিকারিক, জওয়ানরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন। কিশোরের কান্না আর মিতাদেবীর অনুরোধ, “স্বামীকে দেখব, একবার অন্তত কফিনটা খুলুন।” এরপরই হাতুড়ি, শাবল এনে পেরেক খুলে দিলেন জওয়ানরা। শহিদ দীনাঙ্করের মুখের কাছে হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা-ছেলে। একে একে শাঁখা, পলা, লোহা খুলে স্বামীর কাছে রেখে দিলেন মিতাদেবী। রজনীগন্ধা ও আকন্দফুলের মালা পরিয়ে দিলেন। গঙ্গাজল, চন্দনকাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেন। রেখে দিলেন গীতাও। নামাবলি দিয়ে ঢেকে দিলেন স্বামীর নিস্পন্দ দেহ।

ছবি: মুকলেসুর রহমান

বৃহস্পতিবার ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নিহত হন সিআইএসএফ জওয়ান দীনাঙ্করবাবু। শুক্রবার বর্ধমানের হাজার হাজার মানুষ শেষশ্রদ্ধা জানান শহিদকে। বৃহস্পতিবার রাতেই দুর্গাপুর থেকে সিআইএসএফ-এর একটি দল বর্ধমানে চলে এসেছিল। শুক্রবার সিনিয়র কমান্ডান্ট (সাউথ ইস্টার্ন সেক্টর) শরদ কুমারের নেতৃত্বে আরও একটি দল দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানে আসে। দীনাঙ্করবাবুর বাড়ির অদূরে ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে গান স্যালুট দেওয়া হয় সিআইএসএফ-এর তরফে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারাও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন শহিদকে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধরণ) অরিন্দম নিয়োগী, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল খোকন দাস, স্থানীয় কাউন্সিলর পরেশ সরকার, জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ গার্গী নাহা, মহম্মদ ইসমাইল প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান নিহত জওয়ানকে।

এরপর বর্ধমান শহরেরই নির্মল ঝিলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় নিহত জওয়ানের। সেখানে গান স্যালুট জানানো হয় সিআইএসএফ-এর তরফে। সেখানে হাজির ছিলেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। সেখানে শহরের বহু মানুষ ভিড় করেছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতিবেশী বিকাশ বর্মণ, নির্মল দে-রা জানান, খুবই মিশুকে মানুষ ছিলেন। তাঁরা বলেন, “আমরা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না। রতনের দাদা (দীনাঙ্করবাবুর ডাকনাম) মানিক (দীপঙ্কর)-এর গলায় ক্যানসার হয়েছিল। সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। আর তার ছোটই কি না ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে এইভাবে অকালে চলে গেল।”

ছবি: মুকলেসুর রহমান

The post ‘কফিন খোলো, বাবার মুখ দেখব’, কাতর আরজি দন্তেওয়াড়ার শহিদের ছেলের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement