shono
Advertisement

দেবীপক্ষে রক্ত দিয়ে সংকট মোচনের আর্তি অসুরদের

কারা এই মহিষাসুরের বংশধর? দেবীপক্ষে মুখ ব্যাজার করে তারা কেন ব্যস্ত অন্য উৎসবের আয়োজনে? The post দেবীপক্ষে রক্ত দিয়ে সংকট মোচনের আর্তি অসুরদের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:58 PM Oct 03, 2016Updated: 10:28 AM Oct 03, 2016

ব্রতীন দাস: দেবীপক্ষে মুখ ব্যাজার৷ ঢাকের বোল যেন অসহ্য!
তলে তলে চলছে অন্য উৎসবের আয়োজন৷ দেবী দুর্গার আবাহন-ক্ষণেই রক্ত দিয়ে সঙ্কট মোচনের আর্তি অসুরদের৷
ডুয়ার্সের নাগরাকাটার ক্যারন থেকে আলিপুরদুয়ারের জিতু চা বাগান৷ সর্বত্রই জোর প্রস্তুতি ওঁদের৷
দিন বদলের হাওয়া লেগেছে গায়ে৷ তবে মুছে যায়নি বিশ্বাস৷ মহিষাসুরের বংশধর ওঁরা৷ এই ধারণায় আজও অটল৷ আর তাই ভরা আশ্বিনে চারপাশ যখন মেতে উঠেছে দশভুজার আবাহনে, ওঁরা ব্যস্ত নিজেদের বংশরক্ষায়!
নিকানো উঠোনে শুরু হয়েছে ‘নাওয়াখানি’ উৎসবের প্রস্তুতি৷ কোনও অসুরের বাড়িতে আবার নাওয়াখানির সঙ্গে চলছে ‘হরিয়ালি’ পুজোরও আয়োজন৷ যাত্রা-পুজোর তোড়জোড়৷ বিজয়া দশমীতে মা-দুর্গার বিসর্জন হতেই শুরু হবে উৎসবের তিথি৷ এখন তারই অপেক্ষায় প্রহর গোনা৷
সোনালি রঙের মুরগির রক্ত দিয়েই সাজানো হবে সঙ্কট মোচনের নৈবেদ্য৷ কিন্তু চাইলেই তো আর সোনালি রঙের মুরগি মিলবে না! তাই এক বনবস্তি থেকে অন্য বনবস্তিতে চলছে খোঁজ৷ শুরু হয়েছে বনজঙ্গল ভেদ করে ‘যাত্রাশী’ পাতা জোগাড়ের কাজও৷ কারণ, সেটিও যে অসুর-পুজোর অন্যতম উপকরণ৷
অস্ট্রিক-দ্রাবিড় গোষ্ঠীর বংশধর অসুরদের একসময় বাস ছিল ডুয়ার্সের কয়েকটি চা বলয়েই৷ ধীরে ধীরে কৃষি অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে থাকেন তাঁরা৷ তবে সংখ্যাটা ক্রমেই কমছে৷ বর্তমানে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা মিলিয়ে হাজার তিনেক অসুর রয়েছেন৷ বেশিরভাগই চা বাগানে কাজ করেন৷ অনেকে আবার ভুটান পাহাড় পেরিয়ে যান পাথর ভাঙতে৷
প্রথা মেনে পুজো হলেও এখানে নেই কোনও পুরোহিত৷ বাড়ির বয়স্ক পুরুষ পুজো করে থাকেন৷ বাড়িতে তেমন কেউ না থাকলে নাওয়াখানি পুজোর অধিকার অসুর পরিবারের বড় ছেলের, এমনটাই জানিয়েছেন লোক সংস্কৃতি গবেষক প্রমোদ নাথ৷ বলেছেন, নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় হাঁড়িয়া৷ আতপ চাল৷ বলির মুরগির মাংস শুধু বাড়ির লোকেদেরই প্রাপ্য৷ তবে বিবাহিতা মেয়ে তা পান না৷
ঘরের দাওয়ায় শোলার ফুল৷ দেবী পক্ষেই প্রাক-নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় রাজবংশী বধূরা৷ ঘরে ঘরে এই উৎসবের খুশি ছড়িয়ে পড়ে৷ নতুন কৃষি-বর্ষের সূচনাকে সামনে রেখেই এই পুজোর আয়োজন৷ ফলে একে প্রাক-নবান্ন উৎসবও বলা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক উমেশ শর্মা৷ বলেছেন, মহানবমীতে ‘মাতা’ পুজোর মাধ্যমেই রাজবংশী সমাজে দেবীর আগমন ঘটে৷ লাঙল-মই-জোয়াল পুজোকে বলা হয় ‘যাত্রাপুজো’৷ শস্য-বৃদ্ধির কামনাতেই এই আবাহন৷
দেবীপক্ষেই তার দেখা মেলে৷ তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে ডুকপারা৷ প্রাচীন এই জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, রাতের আকাশে ‘টিউগ্যাপ’ নক্ষত্রের দেখা মেলা মানেই শয়তানের ছায়া কেটে যাবে৷ পৃথিবীর সব জলাশয় জীবাণুমুক্ত হবে সেই রাতে৷ আর সেই শুভক্ষণে ঘরে ঘরে জ্বলে উঠবে ঘিয়ের প্রদীপ৷ মাখন-চিনি আর ঘরে তৈরি সুরা ‘জার’ দিয়ে তৈরি হবে বিশেষ ভোগ৷ হবে নাচ-গান৷ তিরন্দাজিতে মেতে উঠবেন ডুকপারা৷

Advertisement

The post দেবীপক্ষে রক্ত দিয়ে সংকট মোচনের আর্তি অসুরদের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement