দেবব্রত দাস, খাতড়া: স্বপ্নে এই দেবী আসেন। দেখা দেন। তার পরেই হয় দেবী দুর্গার পুজো (Durga Puja)। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানিবাঁধের সহিস বাড়ির পারিবারিক এই দুর্গাপুজো ঘিরে এমনই লৌকিক স্বপ্নাদেশের কল্পকাহিনি ছড়িয়ে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে স্বপ্নে আর দেবীর দেখা মেলেনি। তাই সহিস বাড়ির দুর্গাপুজোও এবার বন্ধ।
দক্ষিণ বাঁকুড়ার (Bankura) জঙ্গলমহলের প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম রানিবাঁধের সহিস পরিবারের দুর্গাপুজো। এই পরিবারের দুর্গাপুজো ঘিরে একটু অন্যরকম কল্পকাহিনির ছোঁয়া রয়েছে। সহিস পরিবারের দাবি, দেবী দুর্গাপুজোর মাস খানেক আগে তাঁদের পরিবারের কোনও সদস্যকে স্বপ্নে দেখা দেন। দেবী স্বপ্নাদেশে তাঁকে পুজো করার অনুমতি দেন। তার পরেই দেবীর পুজো করা হয়। অর্থাৎ এই পরিবারের কেউ স্বপ্নাদেশ পেলে তবেই এখানে দুর্গাপুজো হয়। নচেৎ নয়। এবার বিধি বাম। স্বপ্নে (Dream) দেবীর দেখা মেলেনি। তাই দেবীর পুজো এবার আর হচ্ছে না সহিস বাড়িতে।
প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন রানিবাঁধের এই সহিসবাড়ির দুর্গাপুজো। তাঁতিপাড়ার সহিস পরিবারের পূর্বপুরুষ রথু সহিস এই দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন। কথিত আছে, তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন দেবী দুর্গার। সেই স্বপ্নে দেখা দেবীর পুজো তিনিই শুরু করেছিলেন। এরপর সময়ের স্রোতে অনেকগুলি বছর পেরিয়ে গিয়েছে। স্বপ্নাদেশের দেবী দুর্গা প্রতিমার পুজো চলে আসছে সহিস বাড়িতে। রথুবাবুর বড় ছেলে ফণিভূষণ সহিস প্রায় ৪০ বছর পুজো করেছেন। কিন্তু স্বপ্নে দেখা না মিললে এই বাড়িতে পুজো করা নিষিদ্ধ। ২১ বছর আগে স্বপ্নে দেখা না পাওয়ায় এই বাড়ির পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবারও সেই একই রীতি। দেবীর স্বপ্নাদেশ মেলেনি। তাই স্বপ্নাদেশের দেবীর আগমনও এবার বন্ধ। তাঁতিপাড়ার একচিলতে টিনের ছাউনি দেওয়া মন্দিরে (Temple) প্রতিমার পুজো হয়।
[আরও পড়ুন: ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে কীভাবে অভিষেকের ধরনা? মুখ্যসচিবকে কড়া চিঠি দিচ্ছে রাজভবন]
সহিস পরিবারের বর্তমান বংশধর রবি সহিস বলেন, “প্রবীণ মানুষদের কাছ থেকে শুনেছি, স্বপ্নাদেশ পেয়েই আমাদের বাড়ির পূর্ব পুরুষ রথু সহিস এই পুজো শুরু করেছিলেন। দেবী দুর্গা রথুবাবুকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। তাই তিনি এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রতি বছর দেবীর স্বপ্নাদেশ পেতেন। আর এই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরেই তারা প্রতি বছর দুর্গাপুজো করতেন। মাঝে ২১ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর নতুন করে দেবীর স্বপ্নাদেশ না পাওয়ায় পুজো বন্ধ রেখেছিলাম। আসলে আমাদের এই পুজো স্বপ্নাদেশ না পেলে করা যায় না। এবছর স্বপ্নাদেশ পাইনি। তাই পুজো আর করছি না।”
[আরও পড়ুন: টোকেন জমানা শেষ? পুজোর আগে ‘কাগজের টিকিট’ আনছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো]
তিনি আরও বলেন, “বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গিয়েছিলেন দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দিলেই পুজোর আয়োজন করবি। না হলে তোরা আর পুজো করিস না। আমরা দেবীর স্বপ্নাদেশ পাইনি। পুজোও তাই বন্ধ রেখেছি। দেবী যে বছরে আমাদের পরিবারের কাউকে স্বপ্নে দেখা দেবেন, আমরা আবার নতুন করে পুজো করব।” এই পরিবারের আর এক সদস্য কমল সহিস বলেন, “স্বপ্নে দেখা না পেয়ে পুজো করলে যদি পরিবারের অমঙ্গল হয় সেই ভয়ে আমরা সাহস করে এবার পুজো করছি না। এটাই আমাদের এই পুজোর প্রচলিত রীতি।”