shono
Advertisement

মোবাইল সারানোর ছলে ব্যাংক থেকে টাকা গায়েব করে গ্রেপ্তার ৭

কীভাবে মোবাইলকে কাজে লাগাত প্রতারকরা? The post মোবাইল সারানোর ছলে ব্যাংক থেকে টাকা গায়েব করে গ্রেপ্তার ৭ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:33 PM Jun 18, 2018Updated: 09:03 PM Jun 18, 2018

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: মোবাইলে নেটওয়ার্ক সমস্যা৷ আর সেই নেটওয়ার্ক ঠিক করতে এসে উধাও ব্যাংকের টাকা। সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটছে দুর্গাপুরে। এই চক্রটি খুব নিপুণভাবে কাজ করে।

Advertisement

নেটওয়ার্ক ঠিক করার জন্য ওই সার্ভিস প্রোভাইডার এসএমএস করতে বলে৷ ব্যস, এসএমএসে উত্তর দিলেই ফাঁকা ব্যাংক অ্যাকাউণ্ট৷ এইভাবে এটিমের পিন নম্বর হাতিয়ে আ্যকাউণ্টের টাকা গায়েব করার প্রতারণা চক্রের হদিশ মিলল দুর্গাপুর ও আসানসোলে ৷ প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে প্রতারকদের বিরুদ্ধে৷ এখনও পর্যন্ত এই চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷

[ পাওনা দু’লক্ষ টাকা আদায় করতে গিয়ে খুন প্রৌঢ়, চাঞ্চল্য বালুরঘাটে ]

বিশেষ সূত্রে, খবর পেয়ে অন্ডাল থানার পুলিশ এই সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত কিং পিনের হদিশ পায়৷ অণ্ডালের থানা রোড এলাকার বাসিন্দা বিকাশ পণ্ডিতকে গ্রেপ্তার করেই পুলিশ এই চক্রের হদিশ পায়৷ পুলিশের কাছে খবর আসে যে, এই বিকাশ পণ্ডিত বিভিন্ন ফোন নম্বর থেকে ফোন করে বহু লোকের টাকা হাপিশ করে ই-ওয়ালেটে ট্রান্সফার করত৷ তারপর অনলাইন শপিং করে পরে সেই সামগ্রী বিক্রি করে নগদ অর্থ রোজগার করেছে৷ পুলিশ বিকাশের ব্যাংক আ্যাকাউণ্টের স্টেটমেণ্ট নিয়ে পরীক্ষা করে দেখে যে প্রচুর টাকার অনলাইন শপিংও হয়৷ পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে অন্যান্যদের হদিশ জানতে জেরা শুরু করে৷ জেরা করে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ এই চক্রের অন্যতম পান্ডা চন্দন প্রসাদ সাউকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷

এথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে রাজস্থানে পড়াশোনা করা চন্দনই ঠিক করে এই গায়েব করা অর্থ কোন আ্যকাউণ্টে ট্রান্সফার করা হবে। সেখান থেকে কোন ব্যাংক আ্যকাউণ্টে আনার পর সেই অর্থে অন লাইন শপিং হবে তাও সে ঠিক করত৷ রানিগঞ্জের নিমচা তদন্ত কেন্দ্রর জে কে নগর এলাকার বাসিন্দা চন্দন৷ অন লাইনে শপিংয়ে মূলত দামী দামী মোবাইল ফোন কিনত এই প্রতারণা চক্র৷ কয়েকদিন ব্যাবহার করে তা সামান্য কম দামে অন্য দুটি মোবাইল দোকানে বিক্রি করে দিয়ে নগদ আমদানি করত এই চক্র৷ এই চক্র চালিয়ে প্রচুর অর্থ আমদানি করেছে চন্দন ওরফে সোনু৷

[ সিবিআই তদন্তের আরজি, কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবার ]

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনুর গোটা বাড়িতেই এসি মেশিন রয়েছে৷ এমনকী তার শৌচাগারেও লাগানো রয়েছে ঠান্ডা রাখার দামী মেশিন৷ ঘরে রয়েছে দামি পঞ্চাশ ইঞ্চির এলইডি টিভি৷ সন্দেহ হয় সেখান থেকেই। এরপরই আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতায় একে একে গ্রেপ্তার করা হয়, বিহারের দেওঘরের বাসিন্দা রীতেশ মণ্ডল, রানিগঞ্জের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল ও দুর্গাপুরের ওয়ারিয়ার বাসিন্দা দিনেশ মণ্ডলকে৷ এদের জেরা করেই নিমচা ফাঁড়ি এলাকার বেলিয়াবাথানের অজয় মাহাতো ও আসানসোল দক্ষিণ থানার মহিশীলা কলোনীর বাসিন্দা গৌরিশঙ্কর পাণ্ডাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে৷

প্রাথমিকভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা অনুযায়ী ধৃতদের গ্রেপ্তার করা হলেও চার্জশিটের সময় সাইবার ক্রাইমের ধারা সংযোজন করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে৷ গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, এই চক্রের সঙ্গে রাজস্হান, নেপাল কর্ণাটক ও বিহারের যোগসূত্র প্রাথমিকভাবে পাওয়া গিয়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রটি প্রতরণার ফাঁদ পেতেছিল৷ শুধুই ফোন করে ব্যাংকের বা মোবাইলের সিমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে টাকা গায়েব করত এই চক্র৷ ‘সিম সোওয়াপিং’ করেই সিমের তথ্য হাতাত এই চক্র৷

কী এই ‘সিম সোওয়াপিং’? ফোনের নেটওয়ার্ক খারাপ আছে বলে সার্ভিস প্রোভাইডারের নামে ফোন করে এসএমএস পাঠাতে বলা হত৷ এসএমএস পাঠালেই ওই সিমটি ডি-আ্যকটিভেট হয়ে যেত৷ প্রতারকদের কাছে থাকা ডামি সিমটি এ্যকটিভেট হত৷ তারপর অন লাইন শপিং করলে যে ওটিপি নম্বর আসত ডামি সিমেই৷ কিছুক্ষণের মধ্যে ফের অ্যাক্টিভেট হয়ে যেত মূল সিম৷ ফলে ওই ফোনের মূল ব্যাবহারকারী জানতেই পারত না এই অন লাইন শপিংয়ের কথা৷

[ জন্মদিনে ভবঘুরেদের ভোজ, মানবিকতার নজির বালুরঘাটের যুবকের ]

ধৃতদের সোমবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের বারো দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়৷ আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি-১ অভিষেক মোদি জানান, “হ্যকিংয়ের ক্ষেত্রে বড়সড় সাফল্য পাওয়া গিয়েছে৷ প্রায় গোটা দেশেই এইভাবে হ্যাকিংয়ের ফাঁদ পেতেছিল এই চক্র৷ বেশ কয়েকজনকে ধরা হয়েছে৷ এদেরকে হেফাজতে নিয়ে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যদেরও ধরা হবে৷” তবে গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, যাদের ধরা হয়েছে তারা চুনোপুঁটি মাত্র৷ বহুদূর বিস্তৃত এই চক্র৷ তবে এটিএম নম্বর জেনে ব্যাংক আ্যকাউণ্ট ফাঁকা করে দেওয়ার যে প্রতারণার জাল এতদিনে তার নাগাল পাওয়া সম্ভব হল মনেই মনে করছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা।

The post মোবাইল সারানোর ছলে ব্যাংক থেকে টাকা গায়েব করে গ্রেপ্তার ৭ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement