shono
Advertisement

জেলায় জেলায় বিশ্বকর্মা: বাতিল লোহায় ভ্যানো তৈরি করে দিন গুজরান প্রৌঢ়ের

রং-চটা ভ্যানোতেও স্বপ্ন দেখেন তমলুকের তালেব মিঞা। The post জেলায় জেলায় বিশ্বকর্মা: বাতিল লোহায় ভ্যানো তৈরি করে দিন গুজরান প্রৌঢ়ের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:54 PM Sep 16, 2018Updated: 03:54 PM Sep 16, 2018

সৈকত মাইতি, তমলুক: সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য নেই। তাই বলে সাধপূরণের বাসনা থাকবে না তাতো হয় না। তাই শূন্য থেকে শুরু করেও সাফল্যের স্বপ্ন দেখেন অনেকে। তবে কতটা সফল হতে পারেন তা বিতর্কের বিষয়। সেই যাই হোক চেষ্টা করে যিনি ভাঙাচোরা লোহাকে সজীব করে তোলেন, তিনিই তো বিশ্বকর্মা। আমাদের আশপাশে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই এমন অনেক বিশ্বকর্মা নজরে পড়বে। তমলুকের বাসিন্দা শেখ আবুতালেবের কর্মময় জীবন কথাও সেইরকমই।

Advertisement

জীর্ণ ভ্যানো, ছাউনি থেকে খসে পড়ছে জং পড়া লোহার টুকরো। বহুকাল হল ভ্যানোর গায়ে রঙের প্রলেপ পড়েনি। কিন্তু মালিন্যের মাঝেও আন্তরিকতার ছাপ সুস্পষ্ট। প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছে যাওয়া মানুষটি যাত্রীদের ঈশ্বর জ্ঞান করেন। ভ্যানোর বহিরঙ্গের চেহারা দেখে অনেক যাত্রীই পত্রপাঠ বিদায় করে দেন। কিন্তু যাঁরা জানেন তাঁরা তালেব মিঞার ভ্যানোর দিকেই এগিয়ে আসেন। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চারজনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবুও আশায় বুক বেঁধে খেটে চলেন আবুতালেব। মানুষের মুখে মুখে পৈতৃক নামটি কখন তালেব মিঞা হয়ে গিয়েছে মনেও করতে পারেন না।

[স্টেশনের কুয়োর জল যেত ঠাকুরবাড়িতে, মহেশমুণ্ডাকে হেরিটেজ ঘোষণা রেলের]

পায়ে চলা ভ্যান নিয়েই রোজগার শুরু হয়েছিল। একটা সময়ে দেখলেন সারা দিনে সাকুল্যে দু-একজন তাঁর বাহনে উঠছেন। রোজগারপাতি তেমন কিছুই হচ্ছে না। বাচ্চাদুটির মুখে কী তুলে দেবেন, তার ঠিক নেই। চিন্তায় রাতের ঘুম চলে যায় তালেব মিঞার। ভ্যানো কেনার সামর্থ্য নেই। তাই বলে না খেয়ে তো মরতে পারেন না। এদিকে বয়স বেড়েছে, পায়ের চাপে প্যাডেল ঘোরে না। গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাওয়ায় তালেব মিঞাকে দেখলেই যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। এসব দেখেও হাল ছাড়েননি তিনি। যা দু-চার পয়সা জমিয়েছিলেন তাই দিয়েই বাতিল গাড়ির যন্ত্রাংশ কিনতে শুরু করেন। কিন্তু যাই কেনেন, ভ্যানো আর তৈরি হয় না। টাকাপয়সা নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। মল্লিকবাজার থেকে পুরনো গাড়ির স্টিয়ারিং ও চাকা কিনে আনেন। বাকি যন্ত্রাংশ এলাকা থেকেই জোগাড় করেছিলেন। এরপর জোড়া দেওয়ার পালা। সমস্ত বাতিল যন্ত্রাংশ জুড়ে একদিন দেখা গেল তালেব মিঞার ভ্যানো তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুরনো টিন দিয়ে ভ্যানোতে ছাউনিও দিলেন। তারপর একটু নিশ্চিন্ত হওয়া। কিন্তু তাতে কী, দিনে দিনে খরচ বাড়ছে। এরমধ্যে পাঁচ বছর কেটেছে। সংসার সামলে ভ্যানোতে নতুন রং করানোর ব্যবস্থা করতে পারেননি।

যাত্রীরা ঝকঝকে গাড়ি দেখলে তাঁর ভ্যানো ফেলে এগিয়ে যান। পাল্লা দিয়ে বাড়ে মন খারাপ। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন তিনি। তাই ফের মোটর চালিয়ে স্টার্ট দেন ৪১নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া রাধামণি বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে যায় তালেব মিঞার লজঝরে ভ্যানো। কালো ধোঁয়ায় বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে নেন অনেকেই, হাতের ইশারায় দাঁড়াতে বলে ভ্যানোতে লাফিয়ে ওঠেন কলেজ ছাত্র। যাক এবেলায় অন্তত হাঁড়ি না চড়ার কারণ নেই।

তমলুকের পিপুলবেড়িয়া দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাপবসান এলাকায় পৈতৃক বাড়ি রয়েছে আবুতালেবের। তাঁর বাড়িতে গেলে স্ত্রী মুসেদা বিবি জানান, একপ্রকার জেদ করেই ভ্যানো তৈরি করেছিলেন। সারা দিন হাড় ভাঙা খাটুনির পর রাতে চলত ভ্যানো তৈরির কাজ। পাঁচ বছর চলেছে। এখন যদি টুকটাক সারাই না হয় তো আগামী বর্ষায় অচল হয়ে যাবে সাধের ভ্যানো। পুজোর আগে রং পড়লে রোজগারও বাড়ত। কী আর করা যাবে। ভাঙা লোহা জুড়েই গোটা স্বপ্ন দেখার রাত খুঁজে নেবেন তমলুকের শেখ আবুতালেব।

[আদালতের মধ্যে এক টুকরো শৈশব, রাজ্যে শুরু ‘শিশুবান্ধব কোর্ট’]

The post জেলায় জেলায় বিশ্বকর্মা: বাতিল লোহায় ভ্যানো তৈরি করে দিন গুজরান প্রৌঢ়ের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement