সুমিত বিশ্বাস ও সুনীপা চক্রবর্তী: জিনাতের পুরুষসঙ্গীর মনস্তত্ত্ব বুঝে প্রেমিক বাঘকে বন্দি করতে সুন্দরবন মডেলের উপর ভরসা করছে অরণ্য ভবন। সেই অনুযায়ী জিনাতকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা সুন্দরবনের সজনেখালি বিট অফিসার তথা শুটার মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের নেতৃত্বে ৫ জনের টিম পা রাখল জঙ্গলমহলে। সোমবার রাতে সুন্দরবনের ওই টিম ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে পৌঁছয়। মঙ্গলবার থেকে সুন্দরবনের ধাঁচেই প্রেমিক বাঘকে বন্দি করার অভিযান শুরু করবে ওই দল। বাঘের মন বুঝেই কৌশল নেবেন তারা।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, "জিনাতকে যারা কাবু করেছিলেন সেই সুন্দরবনের টিমকেই নিয়ে আসা হয়েছে। সুন্দরবনের ধাঁচেই বাঘবন্দি অভিযান হবে।" এদিকে ওই প্রেমিক বাঘ গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ থেকে ১৬ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে শুধু পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম নয়। বাঁকুড়া ছুঁয়েও চড়কিপাক খায়। বনদপ্তর বাঁকুড়ার বিষয়টি স্বীকার করতে না চাইলেও যেভাবে পায়ের ছাপ মিলেছে তাতে কার্যত পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়ার সীমানায় বাঁকুড়াও ছুঁয়েছে সে। অর্থাৎ বাংলাতে এসেও জিনাতের ফেলে যাওয়া পথেই চলছে তার পদচারণা।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে উদলবনি গ্রামে চাষের জমির পাশে পায়ের ছাপ। সোমবার। ছবি: অমিতলাল সিং দেও
বনবিভাগ জানিয়েছে, রেডিও কলারহীন বাঘকে বাগে আনতে ভীষণই সমস্যা হচ্ছে। তাই তার পদচিহ্নকে সামনে রেখে ট্রেল বোঝার চেষ্টা করছেন বনকর্তারা। বাঘের রোডম্যাপ অনুযায়ী অভিযানের নীল নকশা সাজাবে সুন্দরবনের টিম। তার আগে অবশ্য এদিন ঝাড়গ্রামের বাঁশপাহাড়ি রেঞ্জে মোষের টোপ দেয় বনবিভাগ। কিন্তু তাতে ধরা দেয়নি জিনাতের পুরুষসঙ্গী। পুরুলিয়ার সীমানায় ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের বাঁশপাহাড়ি রেঞ্জে যেখানে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পদচিহ্ন মিলেছে সেখানেই ওই টোপ দেওয়া হয় বলে বনদপ্তর জানিয়েছে। এদিন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এই তিন জেলায় ধানের জমি, মাঠ, ধুলোপথে দক্ষিণরায়ের অসংখ্য পদচিহ্ন মেলে।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে কেশরা-উদলবনি রাস্তায় বাঘের পায়ের ছাপ। সোমবার। ছবি: অমিতলাল সিং দেও
কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলের রাইকা, উদলবনি, যমুনাগোড়া এবং যমুনা বনাঞ্চলের গোলকাটা এছাড়া বাঁকুড়া বনাঞ্চলের লাউপালে বাঘের পদচিহ্ন পাওয়া যায়। জিনাতের ওই পুরুষ সঙ্গীকে বাগে আনতে প্রযুক্তিরও সাহায্য নিয়েছে রাজ্যের বন বিভাগ। ড্রোনে নজরদারির পাশাপাশি ঝাড়গ্রামে স্মার্ট ক্যামেরা সেই সঙ্গে ওই বাঘের পদচিহ্ন মেলা বাঁশপাহাড়ি বনাঞ্চলের বগডোবা, মনিয়াডি, জুজারধরাতে ৫০ টি নাইট ভিশন ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। একইভাবে পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ান এক ও যমুনা বনাঞ্চলে সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ১৫টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে। জঙ্গলে নজরদারির জন্য পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ছাড়া বাঁকুড়ার বনকর্মীদেরকেও মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতেই রবিবার রাতে জুজারধরার কাছে জঙ্গল পথে বাঘের বিষ্ঠাও পাওয়া যায়। বন বিভাগ জানিয়েছে, ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি একেবারে কাঁকড়াঝোর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। সেই পদচিহ্নও রয়েছে। এদিন ঝাড়গ্রামে দপ্তরের আধিকারিকদের একটি বৈঠকও হয়। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, "আমরা মানুষজনকে এটাই বোঝাচ্ছি একেবারেই আতঙ্কিত হবেন না। আমরা সব সময় পাশে আছি। রেডিও কলারহীন বাঘকে বাঘে আনতে আমরা সব রকম চেষ্টা করছি। "
এদিকে সুন্দরবনের টিমে সজনেখালি বিট অফিসার মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের নেতৃত্বে বাকি যে চারজন সদস্য রয়েছেন তারা হলেন বনরক্ষী রাজীব নস্কর, অরণ্যসাথী কালিপদ গায়েন, শম্ভু দাস, বন্যপ্রাণ চিকিৎসক শঙ্কর শেখর বিশ্বাস। ৫০০ মিটার ঘেরার জন্য পর্যাপ্ত জাল এবং তিনটি খাঁচার সঙ্গে তাদের কাছে রয়েছে দুটি ট্রাঙ্কুলাইজার গান। জিনাতকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা ওই বিট অফিসার মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, " যে এলাকায় বাঘের অবস্থান রয়েছে সেটা নিশ্চিত হয়ে আমরা সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাঘের মন বুঝে পদক্ষেপ নেব।" রবিবারের মতো সোমবারও জঙ্গলমহলের তিন জেলাতেই রাতেও সার্চলাইট জ্বালিয়ে বনমহলে নজরদারি চলে বনদপ্তরের।