সৈকত মাইতি, তমলুক: চন্দ্রযান ২-এর বিফলতাই প্রেরণা জুগিয়েছে চন্দ্রযান ৩-এর (Chandrayaan 3) সফল অবতরণে। তাই তো গোটা দেশ যখন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের পর উৎসবের মেজাজে, তখনও চূড়ান্ত ব্যস্ততায় কন্ট্রোল রুমে বসে রাত জাগছেন চন্দ্রযান ৩ অভিযানে যুক্ত পাঁশকুড়ার পীযূষকান্তি পট্টনায়েকদের মতো ইসরোর (ISRO) বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযান চাঁদের পিঠে অবতরণের পরেও যেন নতুন করে ফের আসল লড়াইটা শুরু হয়েছে তাদের।

ইসরোর বিজ্ঞানী পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার (Pashkura) পীযূষকান্তি পট্টনায়ক। চন্দ্রযান ২-এর পর ফের চন্দ্রযান ৩ অভিযানেও সরাসরি যুক্ত তিনি। পাঁশকুড়া ব্লকের ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর কাটাল এলাকার বাসিন্দা। বাবা রাধাকান্ত পট্টনায়ক সেচ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মা অনিমা পট্টনায়ক গূহবধূ। স্ত্রী ঐন্দ্রিলা পাল পট্টনায়েক। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে পীযূষ। পাঁশকুড়ার কাটাল গ্রামের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন তিনি সস্ত্রীক বেঙ্গালুরুতেই (Bengaluru) রয়েছেন। চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের নেপথ্যে অন্যতম এক সদস্য পীযূষকান্তি। পরিবার থেকে প্রতিবেশী সকলেই গর্বিত তাঁর জন্য।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর কাণ্ডের মাঝে ফের অঘটন, দুর্গাপুরে হস্টেল থেকে উদ্ধার ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ]
তবে এ ছেলের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল বাংলা মাধ্যমে গ্রামের প্রাথমিক স্কুল থেকেই। এরপর পাঁশকুড়া ব্র্যাডলি বার্ট হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক ডিগ্রি লাভ করেন পীযূষকান্তি। এরপর ২০১৫ সালে খড়গপুর আইআইটি (IIT- Kharagpur) থেকে এম টেক সম্পূর্ণ করেন। আর ওই বছরই ইসরোতে যোগ দেন। আট বছর ধরে ইসরোয় কর্মরত পাঁশকুড়ার এই কৃতী ছাত্র। তাই বুধবার যখন সারা বিশ্বের চোখ চন্দ্রযানের দিকে তখন পীযূষকান্তির বাবা-মা, স্ত্রীও তীব্র উৎকণ্ঠায় টিভির পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারেননি। কারণ, চাঁদ এবং পৃথিবীর তাপমাত্রার (Temparature Difference) যে তফাৎ সেই সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন পাঁশকুড়ার এই বিজ্ঞানী। তাঁকে নিয়ে গর্বিত গোটা পাঁশকুড়া তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। চন্দ্রযান ২-তেও যুক্ত ছিলেন পীযূষকান্তি। খুব স্বাভাবিক কারণেই অতীতের ব্যস্ততা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতের এমন সাফল্যে মহাকাশ বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হল পাঁশকুড়ার নামও।
[আরও পড়ুন: চাঁদের মাটিতে মাত্র ১৪ দিন কাজ করবে প্রজ্ঞান, কেন তার আয়ুষ্কাল এত স্বল্প?]
পাঁশকুড়ার এক অনামী গ্রাম থেকে বেঙ্গালুরুর ইসরো অফিস-নিজের জেদ, অধ্যাবসায় এবং মেধাকে পাথেয় করে স্বপ্নকে সত্যি করেছেন পীযূষকান্তি পট্টনায়ক। স্কুল থেকে কলেজ সব জায়গায় মেধাবী ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিল। তাই ২০১৩ সালে অনায়াসে খড়্গপুর আইআইটিতে ভরতির সুযোগ পান। পড়াশোনা শেষ হতেই সোজা ইসরোর অফিস। এ যেন স্বপ্নের উড়ান! ইসরোর পর পর দু’টি চন্দ্রযানে যুক্ত হওয়া আরও তাঁর কাছে বিরাট পাওনা। কন্ট্রোল রুম (Control Room) থেকে অনবরত তাপমাত্রার হেরফের নিয়ে কাজ করে চলছেন। গোটা টিমের লক্ষ্য একটাই, চন্দ্রযান ৩-এর সফলভাবে অবতরণ। এরপর আরও কঠিন লড়াই।
পীযূষকান্তি পট্টনায়েকের বাবা রাধাকান্তবাবু বলেন, ”বুধবার ভোরে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর অবতরণের মুহূর্তে সবকিছুই ঠিকঠাক থাকার পর কিছু সময়ের জন্য বাসায় ফিরে এলেও ফের ভোর রাতে বেরিয়ে গিয়েছে। এরকম একটি কর্মকাণ্ডে ছেলে যুক্ত থাকায় আমাদের ভীষণ ভাল লাগছে।”