দেব গোস্বামী, বোলপুর: অনুব্রত মণ্ডলের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন কাজল শেখ। কেষ্টও কাজল শেখের মাথায় হাত দিয়ে করলেন আশীর্বাদ। জয়দেব-কেন্দুলির মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এই ছবি ভাইরাল। আপাত দৃষ্টিতে এই ঘটনা সৌজন্যের, কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা অন্য মাত্রা যোগ করল। কারণ, দলীয় রাজনীতিতে দুজনই দুজনের বিরোধী বলে পরিচিত।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সভাধিপতি কাজল শেখের গোষ্ঠীর চাপানউতোর বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। তারমাঝে এই দৃশ্য জেলা রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল। ফলে দলীয় সূত্রে চাউর হয়, কেষ্টর গড়ে ধীরে ধীরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছেন জেলা সভাধিপতি কাজল। কিন্তু বর্তমানে জামিনে মুক্ত অনুব্রত। ফিরেছেন বীরভূমে। ফলে দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই বারবার প্রকাশ্যে এসেছে।
সোমবারও নানুরে প্রাক্তন সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি রিঙ্কু চৌধুরির উপর হামলার অভিযোগ ওঠে সভাধিপতি কাজল শেখের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। রিঙ্কু দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। কিছুদিন ধরেই প্রাক্তন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। তাঁকে দেখতেই এদিন নানুরের ব্রাহ্মণখণ্ডগ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা রিঙ্কু চৌধুরী। শাসক দলের অন্দরে খবর, রিঙ্কু চৌধুরী ও আব্দুল কেরিম খান দুজনেই অনুব্রত ঘনিষ্ঠ। আবদুল কেরিম খানকে দেখে বাড়ি ফেরার পথেই রিঙ্কু চৌধুরী প্রকাশ্য রাস্তায় আক্রান্ত হন। রিঙ্কু অভিযোগ করেন, জনা পঞ্চাশেক ব্যক্তি তাঁর উপর চড়াও হয়। প্রত্যেকেই কাজল অনুগামী। অনুব্রতর অনুগামী হওয়ার জন্যই প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্ত।
নানুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, "মারধরের ঘটনা জানা নেই। তবে রিঙ্কুকে নানুরের বেশ কয়েকজন যুবক খোঁজ করছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন রিঙ্কু। তারপর থেকেই আর তাঁদের ফোন ধরছিলেন না। ফলে এর থেকেই বহিঃপ্রকাশ ঘটে কোনও ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বর্তমানে রিঙ্কু দলের কেউ নয়।" বিবাদের কথা মানতে রাজি নন দলের কেউই। যদিও এ বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডল অথবা কাজল শেখ কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।