সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘আমার কাছে পাবে শুধু কাঁচা বাদাম’, এই গান গেয়ে বাদাম বিক্রি করেন বীরভূমের (Birbhum) ফেরিওয়ালা ভুবন বাদ্যকর। আর এই গানের জন্য তিনি ইতিমধ্যেই ভাইরাল। এখন তাঁকে চিনেছে বিশ্ব। আর সেই ভুবন বাদ্যকরকেই পুরুলিয়ার (Purulia) প্রান্তিক পুর-শহর ঝালদায় ভোট প্রচারে নামিয়ে বাজিমাত করল শাসকদল তৃণমূল (TMC)। ভাইরাল হওয়া গানের সঙ্গে পুর ভোটের প্রচারে তাঁর সদ্য রিলিজ হওয়া দ্বিতীয় গানেও মেতেছে আট থেকে আশি। আর ঝালদার প্রচারে ফের সেই গান গেয়েই ঝড় তুললেন।
“বীরভূমেতে বাড়ি আমার/নামটি হয় ভুবন/ আমার বাদাম কেড়ে নিল বিশ্ববাসীর মন/ শিল্পী হতে চাই গো বাবু/ জানাই গো প্রণাম/ বাদাম, বাদাম বুবু কাঁচা বাদাম/ আমার কাছে নাই চাচা ভাজা বাদাম।” ভুবনের রঙিন ভোট প্রচারে ঝালদা পুর শহর এখন শুধুই বাদামময়। লক্ষ্মীবারে এই পুর শহরের মেরি আপকার ময়দান থেকে পুরভোটের প্রচার শুরু করেন ‘কাঁচা বাদাম’ গানের স্রষ্টা ভুবন বাদ্যকর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এই পুর শহরের ছ’ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান, প্রশাসক সুরেশ আগরওয়াল, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জবা মাছোয়াড় ও বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোও।
এদিন ভুবনের (Bhuban Badyakar) প্রচার গাড়ি কালো রঙের হুড খোলা জিপ ফুল ও তৃণমূলের কাটআউট দিয়ে সাজানো ছিল। সঙ্গে দলীয় পতাকা, ফেস্টুন। সেই চেনা গোল টুপিতে লেখা ছিল ‘বাদাম কাকু’। মাইক্রোফোন হাতে গানের সুরে সুরে খানিকটা নাচছিলেনও ভুবন বাদ্যকর। আর তাতেই কুপোকাত কিশোর থেকে তরুণী, ঘরের বধূ থেকে বৃদ্ধ। গাইছিলেন তাঁর দ্বিতীয় গান। আবার কখনও ভাইরাল হওয়া “সিটি গোল্ডের চুড়ি মালা দিয়ে/ মোবাইলের বডিগুলো পাঁচ টাকা দাম/ পায়ে তোড়া হাতের বালা থাকে যদি/ সিটি গোল্ডের চেন, দিয়ে যাবেন/ তাতে সমান সমান তোমরা বাদাম পাবেন।” এই গানে মাতোয়ারা ঝাড়খণ্ড লাগোয়া প্রান্তিক পুরশহর।
[আরও পড়ুন: আনিস হত্যাকাণ্ডে সিটের উপরেই আস্থা, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের]
প্রায় রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়া ভুবনকে দেখতে এদিন ঢল নামে পুর শহরেl যেমনটা বলিউড বা টলিউড নায়ককে দেখতে রাস্তার দু’পাশে থাকে জনতা। খানিকটা সেইরকমই। এদিন তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলে সেলফি। সেইসঙ্গে ভিডিও। কিশোর থেকে তরুণীদের এমনকি ঘরের বধূরাও তাঁকে নিয়ে রীতিমতো মেতে ওঠেন। এই প্রচারের আয়োজক বিদায়ী পুর প্রশাসক সুরেশ আগরওয়ালের ছেলে তৃণমূলের যুব নেতা রোহিত আগরওয়াল বলেন, “মানুষ এখন কী চাইছে সেটা বুঝতে হবে। সেই মনের কথা বুঝেই বাদাম কাকুকে আমরা ভোট প্রচারে নিয়ে এসেছি। তিনি সত্যিই সমগ্র ঝালদা মাতিয়ে দিলেন।”
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনের পরিস্থিতি ‘ঘোর অনিশ্চিত’, নাগরিকদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি ভারতীয় দূতাবাসের]
দিনভর প্রচার করে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে যান ভুবন বাদ্যকর। যেভাবে তাঁকে ছোট থেকে বয়স্কদের আবদার মেটাতে হয়েছে, তাতে প্রচারপর্বেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ওরে কতবার আর গাইব দেখি বল, বয়স হয়েছে তো। আর পারি না বাবা। শুনতে ইচ্ছা হলে এবার তোরা ওই স্মার্ট ফোন থেকে শুনে নিস।” গান গেয়ে গেয়ে তিনি ক্লান্ত হলেও ঝালদার আমজনতার চোখে মুখে কিন্তু সেই ছাপ নেই। হাফ কোর্টের নিচে ফুল জামা, প্যান্ট পরা শিল্পীকে আপন করে নিয়ে খুশিতে মেতে ওঠেন। প্রাক্তন পুরপ্রধান, প্রশাসক সুরেশ আগরওয়াল বলেন, “প্রচারে ঝড় তুলে দিলাম তো!” বিকেলের পর ভুবনের গাড়ি বীরভূমমুখী হলেও ঝালদা মজে সেই কাঁচা বাদামেই। শাসকদলের প্রার্থীর সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে, “শিল্পী হতে চাই গো বাবু, জানাই গো প্রণাম।” ঝালদা ভুবনময়!