বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: গত বছর লোনার্ক হ্রদ বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়াতে না-দাঁড়াতে ভরা মরশুমে বড়সড় ধাক্কা খেলেন সিকিমের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ভূমিধসের জেরে বন্ধ হয়েছে লাচেন রুট। তাই এবারও বড়দিনে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অধরাই থাকছে তুষার চাদরে ঢেকে থাকা নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর লাচেন ও চুংথাং।
শুক্রবার হালকা তুষারপাতের পর বেলা দশটা নাগাদ রংমা রেঞ্জ এলাকায় হুড়মুড়িয়ে মাটি-পাথর নেমে অবরুদ্ধ হয় চুংথাং থেকে লাচেন যাতায়াতের পথ। মঙ্গন থেকেও লাচেনে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। ওই ঘটনার জেরে শুক্রবার কিছু পর্যটক আটকে পড়েছিলেন লাচেন এবং চুংথাংয়ে। কিছুটা ধস সরিয়ে পর্যটকদের রাতের মধ্যে গ্যাংটকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে সিকিমের মঙ্গন জেলা প্রশাসন। শনিবার ওই রুটে পর্যটকদের পার্মিট ইস্যু করা হয়নি।
জানা গিয়েছে, ধস সরিয়ে বিধ্বস্ত রাস্তা যান চলাচল উপযোগী করে তুলতে কিছুদিন সময় লাগবে। সেজন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য লাচেন ও চুংথাং ভ্রমণের পার্মিট ইস্যু বন্ধ রেখেছে সিকিম পর্যটন দপ্তর।
এদিকে পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু উপত্যকা এবং না-থুলা সীমান্তে ভারী তুষারপাত শুরু হয়েছে। পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, "যেভাবে ধারাবাহিক তুষারপাত চলছে সেজন্য পর্যটকদের আগেই সতর্ক করা হয়েছে। শনিবার ছাঙ্গু উপত্যকা এবং না-থুলা সীমান্ত পুরু বরফের চাদরে মুড়েছে।" কিন্তু আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা শুনছে কে? এদিন সকাল থেকেই পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন ছাঙ্গু উপত্যকায়। একইভাবে লাচেন ও চুংথাং ভ্রমণে গিয়ে শুক্রবার আটকে পরেন শতাধিক পর্যটক। সিকিম পর্যটন দপ্তরের উপদেষ্টা রাজ বসু বলেন, "উত্তর সিকিমে আপাতত মঙ্গন পর্যন্ত যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে। লাচেন রুট খোলার জন্য চেষ্টা চলছে।"
সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে বড়বড় পাথর গড়িয়ে নামতে শুরু করে। এরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় রাস্তা। ঝুঁকি এড়াতে রাস্তাটি যান চলাচলের উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পারমিট দেওয়া হবে না বলে শুক্রবার রাতেই জানিয়েছে মঙ্গন জেলা প্রশাসন। গত বছর লোনার্ক হ্রদ বিপর্যয়ের পর থেকে পর্যটকদের জন্য বন্ধ ছিল উত্তর সিকিম। ১০ ডিসেম্বর খুলে দেওয়া হয় লাচেন।
এরপরই পর্যটকরা লাচুং, ইয়ংথাং, গুরুদংমার হ্রদে ভিড় জমাতে শুরু করে। তুষারপাত শুরু হতে ঢল নামে উত্তর সিকিমে। লাচুং ও লাচেনে হোটেলে ঠাই নেই দশা হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর পর ঘুরে না-দাঁড়াতে ভরা মরশুমে ফের বিপর্যয়। ভূমিধসে বন্ধ হয়ে যায় চুংথাং-লাচেনের মধ্যে যান চলাচল। রাস্তা বন্ধ খবর মিলতে আতঙ্ক ছড়ায় পর্যটকদের মধ্যে। যদিও কোনওরকম মেরামতের পর রাতেই আটকে পড়া পর্যটকদের গ্যাংটকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে প্রশাসন।