শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: কেউ কথা রাখেনি। না রাজ্য, না কেন্দ্র। তাই এবার মহাত্মা গান্ধীর পথে ঘাটালের বানভাসিরা। অনশনকেই হাতিয়ার করে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার দাবিতে সরব হলেন দুই মেদিনীপুর জেলার বানভাসি মানুষ। মঙ্গলবার ঘাটাল শহরের কলেজ মোড়ে তাঁবু খাটিয়ে সকাল থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করেন কয়েকশো বাসিন্দা।
তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন ঘাটালের বহু বিশিষ্টজন থেকে সাধরণ মানুষ। তাঁরা একত্রে আওয়াজ তুললেন, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান (Ghatal Master Plan) কার্যকর করতে হবে’, ‘চিরাচরিত বন্যার হাত থেকে রেহাই দিন আমাদের’। তারপরও যদি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে এগিয়ে না আসে কোনও সরকারই, তখন আমরণ অনশনের পথে যেতেও রাজি বানভাসি মানুষজন। বানভাসিদের সংগঠন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির দুই যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়েক ও দেবাশিস মাইতির ঘোষণা, ‘‘আমরা সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করবই। তা না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষমা করবে না। আর কতদিন আমরা বন্যার জলযন্ত্রণা সইব?’’
[আরও পড়ুন: প্যারাসিটামল থেকে অ্যান্টিবায়োটিক, ১ এপ্রিল থেকে দাম বাড়ছে অগুন্তি জীবনদায়ী ওষুধের]
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দড়ি টানাটানি চলছেই। সেই আটের দশক থেকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে পরস্পরকে দুষে চলেছে দুই সরকার। বর্তমানে তা আরও জোরদার আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণ চন্দ্র নায়েক। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ঘাটালের বানভাসি মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করছে। দুই সরকারেরই প্রতিনিধিরা বারবার বলে যাচ্ছেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করা হবে। কিন্তু কেউই কথা রাখছে না। দুই সরকারেরই বাজেট হয়ে গেল, কিন্তু কোনও সরকারই বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে একটি টাকা বরাদ্দ তো দূর, নামটাই উল্লেখ করল না। কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধি তো বলেই গেলেন দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েই গিয়েছে। কিন্তু কোথায় কী? তাই আমরা বাধ্য হয়ে অনশনে নেমেছি। দুই মেদিনীপুর জেলার ১৩ টি ব্লকের প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের কথা একটুও ভাবলেন না কোনও সরকার। এবার তো আমরণ অনশনের পথ খোলা রইল।’’
এদিনের গণঅনশন কর্মসূচি ছিল সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া থানার রাধাবন গ্রাম থেকে স্বপন বেরা, তপন দোলই, দুমদান গ্রাম থেকে সুভাষ সামন্ত ও সন্তোষ সামন্ত গণঅনশন কর্মসূচিতে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, বর্ষাকাল এলেই বন্যাতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। কৃষিজ ফসল, ঘরবাড়ি গবাদি পশু বাঁচানোর চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যায়। আর কতদিন ভুগতে হবে? দুই সরকারই কানে তুলো গুঁজেছে। তাই অনশন।