shono
Advertisement
Lok Sabha 2024

ভাঙন রোধে মোদির ‘গ্যারান্টি’ কোথায়? ভোটের মুখে ক্ষুব্ধ রতুয়াবাসী

বাড়ি তো বটেই, স্কুল, ব্যাঙ্ক, পুলিশ ফাঁড়ি সবই আর কয়েক বছরের মধ্যেই গঙ্গাগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা।
Posted: 02:58 PM Apr 28, 2024Updated: 03:00 PM Apr 28, 2024

রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘‘কোথায় মোদির গ্যারান্টি, কোথায় আচ্ছে দিন। আমরা কয়েক পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে কোথায় যাব বলতে পারেন? গত পাঁচ বছরে এখানকার সাংসদ গঙ্গা ভাঙন রোধে সামান্য কোনও উদ্যোগই নেননি। শুধু ভোটের সময় আসেন।’’ এভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার ও এলাকার বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন রতুয়ার মহানন্দা টোলার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ধাওয়াল, মনোজ যাদব, সুনীল মণ্ডলরা। কৃষিজমি থেকে পাকাবাড়ি, কিছুতে যেন অরুচি নেই গঙ্গার। বিঘের পর বিঘে জমি খেয়ে এগোচ্ছে নদী। ক্রমশ দূরত্ব কমছে গঙ্গা ও ফুলহারের মধ্যে। এই দুই নদী মিলে গেলে কী যে হবে, সে কথা ভেবে আতঙ্কে ঘুম উড়েছে রতুয়ার মহানন্দা টোলা, বিলাইমারি, শ্রীকান্ত টোলা, কান্তু টোলা-সহ বহু গ্রামের হাজার হাজার মানুষের।

Advertisement

বাড়ি তো বটেই, স্কুল, ব্যাঙ্ক, পুলিশ ফাঁড়ি সবই আর কয়েক বছরের মধ্যেই গঙ্গাগর্ভে চলে যাবে। অথচ, এই গঙ্গা ভাঙন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। রাজ্যের তরফে ইমার্জেন্সি ব্যবস্থা, বালির বস্তার বাঁধ দিয়ে গঙ্গাকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর মালদহে এই গঙ্গা ভাঙন ইস্যু এবার বিজেপির কাছে বড় কাঁটা। মালদহ উত্তর কেন্দ্রে বিজেপির খগেন মুর্মু জিতেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে সংসদে কোনও উদ্যোগই তিনি নেননি। ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় ক্ষোভে ফুঁসছেন মালদহের নদী পাড়ের মানুষজন।

৪০ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রা। ভরদুপুরে পৌঁছেছিলাম বিহার সীমান্তের রতুয়ার মহানন্দ টোলায়। ভাঙনের খোঁজখবর নিতে এসেছি শুনে কয়েকশো গ্রামবাসী জড়ো হলেন নদীর ধারে। গরমেও গঙ্গার স্রোত দেখে মালুম পেলাম বর্ষাকালে কী ভয়ংকর রূপ নেয় নদী। রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িও এই গ্রামেই। গঙ্গা যে গতিতে এগোচ্ছে তাঁর বসত ভিটেও চলে যাবে নদীগর্ভে। বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় গঙ্গা ভাঙন রোধে বহু আন্দোলন করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নির্বিকার মোদি সরকার। বলছিলেন স্থানীয়রা। বিধায়কের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব এই ভাঙন রোধ করার। এলাকার সাংসদ খগেন মুর্মু তো কিচ্ছু করল না। আমি অনশন করেছি। ফরাক্কা ব্যারেজের জিএম-কে ঘেরাও করেছিলাম। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে স্যালুট করে না। তাই বাংলার উপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’’

[আরও পড়ুন: বামেরা ক্ষমতায় এলে দ্বিগুণ হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার! ভোটপ্রচারে সৃজনের মন্তব্য নিয়ে শোরগোল]

রতুয়ার পাশাপাশি মোথাবাড়ি, বৈষ্ণবনগর, মানিকচক-এই সব বিধানসভা এলাকাও ভাঙনের কবলে। মহানন্দা টোলা থেকে আগে গঙ্গার দূরত্ব ছিল ১৯ কিলোমিটার। সেই দূরত্ব কমে এখন হয়েছে তিনশো মিটার, বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব মণ্ডল, অনিল মণ্ডলরা। ইতিমধ্যেই নয়া বিলাইমারি, জঞ্জালি টোলা, বালু গাঁও-সহ একাধিক অঞ্চলকে গঙ্গা গিলে নিয়েছে। এই এলাকায় কাটাহা দিয়ারা হাই স্কুল-সহ তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়, একাধিক প্রাইমারি স্কুল, তিনটি ব্যাঙ্ক, একটি পুলিশ ফাঁড়ি কয়েক বছরের মধ্যেই জলের তলায় চলে যাবে। সামনের বর্ষাতেই এক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্বজিৎ, মনোজদের। জঞ্জালি টোলার বাসিন্দা নিতাই মণ্ডলের বাড়ি, চাষের জমি সব গঙ্গা গিলে নিয়েছে। নিতাইয়ের কথায়, ‘‘এখন মহানন্দা বাঁধের উপর অস্থায়ী ছাউনি করে আছি। এখানে ৫০০ পরিবার রয়েছে।’’

বহু মানুষ যে পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে চলে গিয়েছে তার চাক্ষুষ প্রমাণ গ্রামে ঘুরেই পেলাম। বহু বাড়ি পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। গঙ্গার ধারে হেলে রয়েছে বিদ্যুৎহীন লাইট পোস্টগুলি। বোঝাই যাচ্ছে, আগে এই সব এলাকাজুড়ে বসবাস ছিল। ভয়ে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে এলাকা ছেড়ে। নিজেদের ভবিষ্যতের আশঙ্কার কথা শোনাতে গিয়ে চোখে জল গ্রামের একাধিক মহিলার। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘এখানকার সাংসদ চার হাজার ভোটে লিড পেয়েছিলেন এই এলাকায়। একটা কাজও করেননি।’’ জিতু টোলা বুথের পঞ্চায়েত সদস্য ভানু মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘গঙ্গা আর ফুলহার নদীর মধ্যে আর মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে।’’ পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে যে, ফরাক্কা ব্যারেজের পর পাগলা ব্রিজে ধাক্কা মেরে গঙ্গা বাংলাদেশে চলে যাবে। তখন ফরাক্কা ব্যারেজ স্ট্যাচু হয়ে থেকে যাবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে উত্তরবঙ্গ। স্থানীয় বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘গঙ্গার বাঁ দিক ঘেঁষে ভাঙন চলছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ-এই তিন রাজ্য গঙ্গানদীর ভাঙনের কবলে। কেন্দ্র উদাসীন। ভাঙন প্রতিরোধে কোনও অর্থ মঞ্জুর করছে না।’’

উত্তর মালদহের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মুর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করছে না। দ্রুত ভাঙন রোধে কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ করব।’’ আর মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরি জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে গঙ্গার ভাঙন রোধে লোকসভায় বারবার সরব হবেন। রতুয়ার লক্ষাধিক বাসিন্দা এবারও অসহায়। কাকে কখন খোলা আকাশের নিচে যেতে হবে এই আতঙ্কেই ঘুম ছুটেছে বাসিন্দাদের। গ্রামের মানুষগুলোর সেই অসহায়তা আর কষ্টের কথা শুনে ভারাক্রান্ত মনে যখন ফিরছি, সূর্য তখন অস্তের পথে। নাককাটি ব্রিজ পেরিয়ে জাতীয় সড়ক হয়ে গাড়ি ছুটল মালদহ শহরের দিকে।

[আরও পড়ুন: পুরুলিয়াকে টেক্কা বারাকপুরের! মে মাসে আরও চড়বে পারদ, ৭ জেলায় লাল সতর্কতা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement