সুব্রত বিশ্বাস: দুই নাবালক সন্তানের সামনে পরপুরুষের হাতে ছুরির আঘাতে খুন তরুণী। ‘‘মুঝে ধোঁকা দেনে কা সাজা মিলা’’, খুনি ধরা পড়ার পর তারস্বরে চিৎকার করে শুধু একটা কথাই বলে চলেছে। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা এগারোটা। হাওড়া স্টেশনের বাইরে জনঅরণ্যে ছুরি মারার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য। আহত হয়ে হামলাকারীর আক্ষেপ, ‘‘আসমান আউর সাগর কা মাফিক গহরাই না থা এ লাভ।’’
তদন্তে নেমে হাওড়া গোলাবাড়ি থানার পুলিশ জানতে পারে, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে এই খুনের ঘটনা। শুধু সম্পর্কই নয়, ৪৯ বছরের ব্যবসায়ী মুঙ্গেশকে বিয়ে করার কথা জানিয়েছিল ২৯ বছরের ওই তরুণী। বিবাহিতা ও দুই সন্তানের মা হয়েও সৌন্দর্যে ওই প্রৌঢ়কে দিশাহারা করে তুলেছিল। দুদফায় দশ লক্ষ টাকাও নেয়। মুম্বইয়ে কাজের মাধ্যমে দুজনের পরিচয় ও সম্পর্কের কথা জানতেন তরুণীর স্বামী টিঙ্কু বিশ্বাসও। এক সময় ওই তরুণী মুম্বই থেকে গাইঘাটা এলাকায় বাড়িতে ফিরে আসে। তবে ভিডিওকলে নানা কথাবার্তা চলতে দুজনের। এক সময় অসম প্রেমে পাগল মুঙ্গেশ যাদব মহারাষ্ট্র ছেড়ে গাইঘাটায় ছুটে আসে। দিনকয়েক আগে তরুণী রিভু বিশ্বাসের বাড়িতে এসে ওঠে প্রেমিক মুঙ্গেশ।
হাওড়া স্টেশন চত্বরে ছুরিকাহত হয়ে মৃত তরুণী
[আরও পড়ুন: ‘খাঁচাবন্দি’ করতেই অর্জুনকে তৃণমূলে নেওয়া! বারাকপুরে বিস্ফোরক অভিষেক]
স্বামী টিঙ্কুর প্রশ্রয়ে সেখানেই প্রেমে ওঠে জোয়ার। এর পর বিয়ের প্রলোভনে ফের টাকা আদায়ের চেষ্টা করে রিভু। মুম্বই গিয়ে টাকা দেওয়ার কথা জানায় ওই ব্যক্তি। বুধবারই মুঙ্গেশ মুম্বই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো তাকে হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে তুলতে আসে রিভু ও তার স্বামী, সন্তানরা। নিউ কমপ্লেক্সের অদূরে দুজনে কিছু প্রেমালাপ করার অছিলায় সরে যায়। তখন দূরে কিছু আনতে যায় রিভুর স্বামী টিঙ্কুও। এর পর ফিরে এসে সে দূর থেকে লক্ষ্য করে মুঙ্গেশ পকেট থেকে ছুরি বের করে রিভুর পেটে ঢুকিয়ে দেয়।
ভারী রড হাতের কাছে পেয়ে তা নিয়েই তাড়া করে মুঙ্গেশকে। মাথায় আঘাত করতেই পড়ে যায় মুঙ্গেশ। এদিকে রিভুকে ছুরি মারার সময় তার নিজের হাতও কেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে আরপিএফ। তাদের হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় রিভুর। টিঙ্কুর অভিযোগে খুনের মামালা রুজু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি টিঙ্কুর বিরুদ্ধেও খুনের চেষ্টার মামালা দায়ের করেছে পুলিশ। বিদায় জানানোর লগ্নে দুজনে রংমিলান্তি পোশাকও পরে এসেছিল। নীল রঙের পোশাক যে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে তা বুঝতে পারেনি মুঙ্গেশ। আহত হয়ে তার আক্ষেপ, ‘‘আসমান আউর সাগর কা মাফিক গহরাই না থা এ লাভ।’’