shono
Advertisement
Fraud

প্রচণ্ড গরমই হাতিয়ার জালিয়াতদের! অভিনব কায়দায় প্রতারণা রাজ্যে

ভুয়ো কল সেন্টারেগুলোতে হানা দিয়ে নতুন পদ্ধতিতে পাতা ফাঁদের সন্ধান পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।  
Posted: 02:19 PM Apr 18, 2024Updated: 03:14 PM Apr 18, 2024

অর্ণব আইচ: প্রচণ্ড গরমকেই এবার হাতিয়ার করছে সাইবার জালিয়াতরা। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিলেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে এসি। পৌঁছে দেওয়া হবে ফ্রিজও। ভুয়ো কল সেন্টার থেকে ফোন থেকে এমনই টোপ দেওয়া হচ্ছে। ‘মোডাস অপারেন্ডি’ পাল্টে এবার বিদেশের বদলে দেশেই প্রতারণার ফাঁদ পাতছে কলকাতার ভুয়ো কল সেন্টারগুলো। এরকম একাধিক সেন্টারে হানা দিয়ে নতুন পদ্ধতিতে পাতা ফাঁদের সন্ধান পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।  

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, কিছুদিন আগে শহরের একটি ভুয়ো কল সেন্টারে তল্লাশি চালায় লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা। তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, প্রতারণার পদ্ধতি পাল্টে ফেলেছে জালিয়াতরা। সেই সূত্র ধরে ফের দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোনির একটি কল সেন্টারে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে নজনই মহিলা। ধৃতদের জেরা করেও সেই একই পদ্ধতি জানতে পারেন লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা।

এই বিষয়ে গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, এবার সাইবার জালিয়াতরা মূল হাতিয়ার করছে গরমকে। গরমে যতই হাঁসফাঁস করছেন শহরবাসী, ততই জাল ছড়াচ্ছে তারা। ভুয়ো কল সেন্টারগুলো থেকে ফোন করা হচ্ছে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। এছাড়াও ফোন যাচ্ছে ভিনরাজ্যের শহরগুলোতেও। বিশেষ করে যে রাজ‌্য বা শহরে গরম অত‌্যন্ত বেশি, সেগুলোকেই বেছে নিচ্ছে জালিয়াতরা। কল সেন্টার থেকে কলাররা বিভিন্ন ব‌্যক্তিকে ফোন করে। তিন থেকে চারটি নামী বেসরকারি সংস্থার নাম করে বলা হয়, গরমের আগে সংস্থাটির পক্ষে লটারি করা হচ্ছে। তাতে ওই ব‌্যক্তির মোবাইল নম্বর একটি পুরস্কার জিতেছে। কখনও বলা হয়, তিনি দেড় টন বা দুটনের এয়ার কন্ডিশনার পুরস্কার হিসাবে জিতেছেন। আবার কখনও বলা হয়, তিনি ডবল ডোর রেফ্রিজারেটার জিতেছেন। পুরস্কার জেতার কথা শুনে অনেকেই খুশি হন। তার পরই ফাঁদ পাতে সাইবার জালিয়াতরা।

[আরও পড়ুন: সোমবার থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজ্যের স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি, জারি বিজ্ঞপ্তি]

কীভাবে হয় প্রতারণা? জানা গিয়েছে, প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব‌্যক্তির কাছে ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। তিনি ঠিকানা জানানোর পর কলাররা তাঁকে জানায়, তাঁর ওই ঠিকানায় পুরস্কার সাতদিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। শুধু প্রসেসিং ফি হিসাবে এখন তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। এসি বা রেফ্রিজারেটর তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার পর সেই টাকাও তাঁকে নগদে অথবা ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাাকউন্টে ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ জানিয়েছে, যে সংস্থাগুলোর নাম করে ফোন করা হত, তাতে অনেকেরই সন্দেহ হত না। একটি ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে তাঁকে সেখানে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হত। গরমে এসি বা ফ্রিজের লোভে বহু মানুষ ফাঁদে পা দিয়ে দেন। দেশের বহু জায়গার মানুষই একাধিক ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাাকউন্টে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠান। কিন্তু সাতদিনের জায়গায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও যখন ওই পুরস্কার আর আসে না, তখন ওই ব‌্যক্তিরা দেখেন, যে মোবাইল থেকে ফোন করা হয়েছিল, তা বন্ধ।

যেহেতু হাতিয়ে নেওয়া অর্থের পরিমাণ কম তাই অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারিতরা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন না। গোয়েন্দাদের দাবি, এভাবে একেকটি ব্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্টে কয়েক লাখ টাকা করে জমতে শুরু করে। ওই প্রত্যেকটি ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্টই সাইবার জালিয়াতরাদের ভাড়া নেওয়া। গোয়েন্দাদের মতে, কলকাতা থেকে ভুয়ো কল সেন্টারের মাধ‌্যমে আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের ফোন করে তাঁদের প্রযুক্তিগত সাহায‌্য করার নাম করে টাকা চাওয়া হয়। আবার লিংক পাঠিয়ে একেকজন বিদেশির কাছ থেকে বিপুল বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নেয় জালিয়াতরা। সেখানে ইন্টারপোলের মাধ‌্যমে মার্কিন বা ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগ দায়ের করলেই কলকাতা পুলিশ ভুয়ো কল সেন্টারে তল্লাশি চালায়। তার পরই শুরু হয় ধরপাকড়। তাই পদ্ধতি পাল্টে এখন গরমকেই হাতিয়ার করছে জালিয়াতরা। যদিও এই জালিয়াতি বন্ধ করতেও ভুয়ো কল সেন্টারগুলোতে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: উত্তরে প্রকৃতির দুই রূপ, হাঁসফাঁস গরমে পুড়ছে সমতল, তুষারের চাদরে ঢেকেছে সিকিম]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ‘মোডাস অপারেন্ডি’ পাল্টে এবার বিদেশের বদলে দেশেই প্রতারণার ফাঁদ পাতছে কলকাতার ভুয়ো কল সেন্টারগুলো।
  • পুলিশ সূত্রে খবর, কিছুদিন আগে শহরের একটি ভুয়ো কল সেন্টারে তল্লাশি চালায় লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা। তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, প্রতারণার পদ্ধতি পাল্টে ফেলেছে জালিয়াতরা।
  • সেই সূত্র ধরে ফের দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোনির একটি কল সেন্টারে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে নজনই মহিলা।
Advertisement