সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: “স্যার, এবারের মতো আমাদের জন্য আইনটা একটু শিথিল করলে হয় না? এবার কালীপুজোয় মায়ের কাছে আমার ‘ডিজে’ দেওয়ার মানত রয়েছে। মায়ের পুজোয় এবার ডিজে না দিতে পারলে মা আমার উপর রাগ করবেন মা। এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ, তার উপর মা রুষ্ঠ হলে ব্যবসা আর রাখা যাবে না।” কালীপুজোয় ডিজে বাজাতে দেওয়ার অনুমতি নিয়ে এমনই কাতর অনুরোধ পুজো কমিটির। যা শুনে রীতিমতো অবাক পুলিশ আধিকারিকরা।
মঙ্গলবার বাগনান থানা ও বাগনান থানা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে প্রায় ৭৫ টি কালীপুজো কমিটিকে নিয়ে এক বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাগনান থানার আইসি অমরজিৎ বিশ্বাস, বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন দাস, জয়েন্ট বিডিও সন্দীপ দাস, বাগনান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস হাজরা-সহ বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা। পুজোর দিন এবং বিসর্জনের সময় ডিজে বক্স বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন পুলিশ আধিকারিকরা। কোনও পুজো কমিটি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।
ওই সভা থেকে জানানো হয় লক্ষ্মীপুজোর পরে বাগনান থানা তিন গাড়ি ডিজে বক্স ও মাইক সেট বাজেয়াপ্ত করেছে। সুতরাং পুজো কমিটিগুলোর পক্ষ থেকে প্রশাসনের এই সতর্কবার্তা শুধুমাত্র ফাঁকা আওয়াজ বলে ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। সভা থেকে একই সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জোর করে চাঁদা চাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
[আরও পড়ুন: অন্য নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রেমিক, বাইকে আগুন ক্ষিপ্ত প্রেমিকার]
প্রশাসনের এই দৃঢ় পদক্ষেপে প্রমাদ গুনতে থাকেন ডিজে ব্যবহারকারী পুজো উদ্যোক্তারা। অনেকেই বলেন, ইতিমধ্যে পুজোয় ডিজে বাজানোর জন্য তাঁরা ব্যবস্থাপনা করে ফেলেছেন। কেউ ১০ হাজার আবার কেউ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ডিজে ভাড়া নেবেন বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোনও কোনও পুজো কমিটি আরও বেশি টাকা দিয়ে ডিজে ভাড়া করে থাকে। এখন শেষ মুহূর্তে ডিজের পরিবর্তে অন্য কিছুর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বলেই জানান পুজো উদ্যোক্তারা। কয়েকটি পুজো কমিটি প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে ব্যবহার করার কথাও ভাবে। সেই শোভাযাত্রায় ডিজে না বাজলে ক্লাবের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের। একইসঙ্গে ক্লাবের নতুন প্রজন্মের সদস্যদের মনখারাপ হতে পারে বলেই দাবি বর্ষীয়ানদের। তাই প্রশাসনিক নির্দেশে এইসব পুজো কমিটিগুলি বেশ ফাঁপরে পড়েছে।
এরকমই একটি পুজো কমিটির সদস্য বুধবার সকালে বাগনান থানার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে ফোন করে বলেন, “এবারের মতো তাঁদেরকে ডিজে বাজানোর অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ ব্যবসার উন্নতির জন্য ওই ক্লাব সদস্য মা কালীর কাছে ডিজের খরচ দেওয়ার মানত করেছেন। মা কালীর কাছে করা মানত রক্ষা করতে না পারলে দেবী রুষ্ট হয়ে তাঁর ব্যবসারই ক্ষতি করবেন।” ওই সাব ইন্সপেক্টর ক্লাব সদস্যের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, “মানত রক্ষা করার জন্য তিনি ডিজে বাজাতে পারেন।তবে পুলিশ গিয়ে ওই ডিজে বন্ধ করার ব্যবস্থা করবে।” এখন ডিজে বাজানো নিয়ে নাকি এরকমই আজব আবদার আসছে থানার আধিকারিকদের কাছে। ঘটনার আকস্মিকতায় ওই পুজো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাই যেন ভুলতে বসেছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
The post ‘ডিজে মানত করেছি, এবারের মতো ছেড়ে দিন’, পুলিশের কাছে আজব আবদার ক্লাব সদস্যের appeared first on Sangbad Pratidin.
